কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

উন্নয়নশীল দেশগুলি অশাসনযোগ্য হইয়া উঠিতেছে কেন

তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি বরাবরই বিশৃঙ্খল। তাহার কারণও নিশ্চয়ই রহিয়াছে। এই সকল দেশে রহিয়াছে আইনের শাসনের ঘাটতি। জোর যাহার মুল্লুক তাহার—এই নীতি আজও বিদ্যমান। নাগরিক অধিকার রক্ষার ব্যাপারে এই সকল দেশ উদাসীন ও অযত্নশীল। জাতীয় ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানগুলি ভঙ্গুর। ফলে এই সকল দেশ যাহারা পরিচালনা করেন, তাহাদের অনেক কাঠখড় পোড়াইতে হয়। তাহারা সমস্যার আসল জায়গায় হাত দিতে পারেন না বা দেন না। ইহাতে এই সকল দেশ ম্যানেজ করা সকল সময় সহজ হয় না। অনেক সময় সামাজিক ও রাজনৈতিক পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে চলিয়া যায় যে, ম্যানেজ করিবার মতো পরিবেশই আর থাকে না। তখন চরম অরাজকতা ও বিশৃঙ্খলা দেখা দিলে একসময় সহজ সমাধান হিসাবে দেখা দিত মার্শাল ল’। ইহাতে সংবিধান স্থগিত হইয়া যাইত। পরিস্থিতির উন্নতি হইলে আবার ফিরিয়া আসিত বেসামরিক সরকার; কিন্তু তৃতীয় বিশ্বের দেশগুলি ম্যানেজ করিবার এই অস্ত্রে এখন আর ধার নাই বলিলেই চলে। আজকাল মার্শাল ল দেখা যায় কদাচিৎ। তবে এখন অনেক উন্নয়নশীল দেশে ইহার নবসংস্করণ হইতেছে পুলিশি শাসন। এই সকল দেশকে পুলিশি রাষ্ট্র বলিলেও অত্যুক্তি হয় না। অস্ত্রশস্ত্র ও সাজসরঞ্জাম অনেক দিক দিয়াই তাহারা আজ স্বয়ংসম্পন্ন ও অধিকতর শক্তিশালী। তাই পুলিশ দিয়া যেইখানে শৃঙ্খলা আনা যায়, সেইখানে সেনাবাহিনীর কী দরকার? তাহারা কি নিজ দেশে যুদ্ধ করিবেন?

বৈশ্বিক সংকটের সমাধান হউক আলোচনার টেবিলে

ইউক্রেন যুদ্ধের প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষ্যে আয়োজিত একটি অনুষ্ঠানের ভাষণে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করিয়া বলিয়াছিলেন, ‘এই যুদ্ধ আঞ্চলিক অস্থিরতা উসকাইয়া দিতেছে এবং সেই সঙ্গে বিশ্ব জুড়িয়া উত্তেজনা ও বিভেদ সৃষ্টি করিতেছে।’ ভাষণের শেষাংশে তিনি আহ্বান জানাইয়াছিলেন, ‘ধ্বংসের দ্বারপ্রান্ত থেকে সরিয়া আসার এখনই উপযুক্ত সময়। কারণ, যে কোনো ধরনের আত্মতুষ্টি সংকটকে আরো গভীর করিয়া তুলিবে।’ জাতিসংঘ মহসচিবের সেই ভবিতব্যের মর্মকথা আমরা আজ অনুধাবন করিতেছি প্রতিটি মুহূর্ত! বিশ্ব আজ এক গভীর সংকটে নিপতিত। যুদ্ধ চলিতেছে ইউরোপের মাটিতে। সংঘাতের আগুনে পুড়িতেছে মধ্যপ্রাচ্য অঞ্চল। আত্মতুষ্টির বশবর্তী হইয়া প্রতিপক্ষের উপর প্রথম আঘাত হানিয়া সংকট ডাকিয়া আনিল কোন পক্ষ—ইহা পুরাতন, অমীমাংসিত ও তর্কসাপেক্ষ বিষয়। তবে বৃহত্তর সংঘাতের ঘেরাটোপে পড়িয়া সমগ্র বিশ্ব যে কাহিল হইতে কাহিলতর হইয়া উঠিতেছে, ইহাই আজিকার দিনের বাস্তবতা। ইউক্রেনে হামলা বাড়াইয়াছে রাশিয়া। এই যুদ্ধ কখন, কীভাবে শেষ হইবে, তাহা কাহারো জানা নাই! বরং দুই বত্সরেরও অধিক সময় ধরিয়া চলিতে থাকা এই যুদ্ধ পক্ষগুলিকে মুখোমুখি দাঁড় করিয়া দিয়াছে। ইহার অভিঘাতে বিশ্বব্যাপী যেই অর্থনৈতিক সংকটের অবতারণা ঘটে, তাহা হইতে উত্তরণ তো ঘটেই নাই, উপরন্তু আরম্ভ হইল নূতন সংকট—ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে যুদ্ধ। ঘটনা এইখানেই থামিয়া থাকে নাই, গাজা যুদ্ধের পটভূমিতে বিশ্ব নূতন করিয়া প্রবেশ করিয়াছে দুই চিরশত্রু ইরান ও ইসরাইলের সংঘাতের যুগে। দুশ্চিন্তা মূলত এইখানেই! কারণ, বিশ্বরাজনীতি ও অর্থনীতিতে বিশেষ গুরুত্ব বহন করে মধ্যপ্রাচ্য। এই অঞ্চলে অস্থিরতা শুরু হওয়ার অর্থ হইল সমগ্র পৃথিবীতে তাহার ঢেউ আছড়াইয়া পড়া। বিশেষত মধ্যপ্রাচ্য অস্থিতিশীল হইয়া উঠিলে বিশ্বব্যাপী জ্বালানিসংকট তীব্রতর হইয়া উঠিবে।

অ্যান্টার্কটিকার আবহাওয়ায় উদ্বেগজনক অসংগতি!

বিংশ শতাব্দীর শেষার্ধ এবং এই শতকের একেবারে শুরু হইতে দক্ষিণ গোলার্ধের হিমবাহগুলি ক্রমবর্ধমান হারে গলিতে শুরু করে। বিশেষত, গত দশকের মাঝামাঝি হইতে এই গতি ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পাইতেছে। হিমশীতল অ্যান্টার্কটিকা মহাদেশের এহেন পরিবর্তন গভীর চিন্তা ও উদ্বেগের বিষয় বটে। এই প্রবণতা উদ্বেগজনক হইবেই-বা না কেন? পৃথিবীর দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রার অস্বাভাবিক বৃদ্ধি সমগ্র বিশ্বের জন্যই বড় ধরনের হুমকিস্বরূপ। দক্ষিণ মেরুর বরফঢাকা পূর্বাঞ্চলের মালভূমিতে অবস্থিত কনকর্ডিয়া গবেষণা কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা জানাইয়াছেন, ২০২২ সালের ১৮ মার্চ এই অঞ্চলের তাপমাত্রা মৌসুমি গড় তাপমাত্রার চাইতে ৩৮ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস বাড়িয়া যায়, যাহা বিশ্ব রেকর্ড। বিষয়টি এক কথায় মাথা ঘুরাইয়া দেওয়ার মতো। কারণ, দক্ষিণ মেরুর তাপমাত্রায় একবারে এত বড় লাফ ইহার পূর্বে কখনোই দেখা যায় নাই। শূন্য অঙ্কের নিচে থাকা তাপমাত্রায় এত বড় পরিবর্তন অসহনীয়। সাউথ পোলের এই জলবায়ু পরিবর্তন বিজ্ঞানীদের ভাবাইয়া তুলিতেছে। খোদ আবহাওয়া বিজ্ঞানীরা বলিতেছেন, ‘বিশ্বের সবচাইতে হিমশীতল জায়গার তাপমাত্রায় এমন লাফকে বর্ণনা করার ভাষা আমাদের জানা নাই। আমাদের কেউ ভাবেন নাই যে, এই রকম কিছু ঘটিতে পারে। দক্ষিণ মেরুর এই তাপমাত্রা সাধারণ সীমার বাহিরের বিষয় এবং ইহা যথেষ্ট উদ্বেগেরও বিষয়।’