স্বনির্ভর বাংলাদেশ অর্থনীতির রূপকার
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ । সূত্র : বনিক বার্তা, ০১ মার্চ ২০২৫

আমি তখন জাপানে। বাংলাদেশ দূতাবাসে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর হিসেবে কর্মরত।
আমি তখন জাপানে। বাংলাদেশ দূতাবাসে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর হিসেবে কর্মরত। ঢাকা থেকে ইআরডি সচিব লুৎফুল্লাহিল মজিদ টোকিওতে দূতাবাসে এসে আমাকে বললেন, এম সাইফুর রহমান সাহেব (তৎকালীন অর্থমন্ত্রী) আপনাকে না পেয়ে আমার কাছে হদিস জানতে চাইলেন, জবাবে তাকে জানালাম, স্যার তিনি তো এখন জাপানে।
—কেন, কে পাঠাল? বললাম, স্যার আপনিই তো অনুমোদন দিয়েছিলেন তাকে কমার্শিয়াল কাউন্সিলর করে জাপানে পাঠানোর। জাপানে পোস্টেড হওয়ার আগে আমি ইআরডির ফরেন এইড বাজেট অ্যান্ড অ্যাকাউন্টস (ফাবা) অধিশাখার পরিচালক ছিলাম। সে সুবাদে ১৯৯১-এর প্রথম তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অর্থ উপদেষ্টা অধ্যাপক রেহমান সোবহান, ’৯১-এর নতুন সরকারের শিল্পমন্ত্রী এম জহির উদ্দীন খান এবং অর্থমন্ত্রী এম সাইফুর রহমান সাহেবের সঙ্গে বৈদেশিক সাহায্যের আয়-ব্যয় পরীক্ষা পর্যালোচনার ইনপুট সরবরাহ করা ছিল আমার দায়িত্ব।
ইআরডির ফ্লো অব এক্সটারনাল রিসোর্সেস বইটি ডামফাস প্রজেক্টের আওতায় আধুনিক করার উদ্যোগে অর্থমন্ত্রী মহোদয়ের সানুগ্রহ সমর্থন ও অনুপ্রেরণা ছিল। তিনি নিজে পেশাদার হিসাববিদ ছিলেন। ফলে আমি তখন একজন উপসচিব পর্যায়ের কর্মকর্তা হয়েও সরাসরি মন্ত্রী মহোদয়ের সঙ্গে আমার কর্মসম্পর্ক গড়ে ওঠে। ইআরডির কাজ রেখে আমাকে জাপানে পদায়নের প্রশ্নে মন্ত্রীর তত্ত্বতালাশে লুতফুল্লাহিল মজিদ স্যার বেশ আনন্দ-উৎসাহ বোধ করেই জানতে চাইলেন, তাহলে স্যার মজিদকে ফিরিয়ে আনব? স্বভাবসুলভ ধমকের ভঙ্গিতে মন্ত্রী মহোদয় জানালেন, তাকে ফিরায়ে আনার জন্য কি জাপানে পাঠিয়েছি? জাপান থেকে ভালো কিছু শিখে আসুক।
২০০২-০৩ অর্থবছরের বাজেট ডকুমেন্ট তৈরির কাজ চলছে। আমি তখন অর্থ বিভাগের উপসচিব। ‘বাজেট সংক্ষিপ্তসার’ পুস্তকে আমি ১০টি পাই চার্ট/গ্রাফ প্রক্ষেপণের জন্য ডিজাইন করি। বাজেট ডকুমেন্টে এটি ছিল প্রথম ও সূচনা উদ্যোগ, সেই থেকে মিডিয়াও এখনো তা ব্যবহার করে। মন্ত্রী মহোদয় বাজেট বিশ্লেষণে গ্রাফিক্সের ব্যবহারের উদ্যোগ দেখে বেশ খুশি হলেন, কয়েকদিন পর পর আমাকে ডেকে জানতে চাইতেন তোমার কেকগুলো বানানো কদ্দুর? প্রসঙ্গ দুটি উল্লেখের কারণ এই যে যারা তার সাহচর্যে ধন্য হয়েছিলেন তাদেরকে তিনি নতুন কিছু করার, কাজের গুণগত মান বাড়ানোর ব্যাপারে নিরন্তর উৎসাহিত করতেন।
তিনি অর্থ বিভাগে আমাকে এবং ড. তারেককে (আমরা তখন যুগ্ম সচিব) সর্বোচ্চ পর্যায় পর্যন্ত থাকার বা রাখার জন্য প্রধানমন্ত্রীর কাছ থেকে নথিতে অনুমোদন নিয়ে রেখেছিলেন। তিনি জাপানি প্রশাসনের মতো মনে করতেন কর্মকর্তারা মন্ত্রণালয় থেকে অন্যত্র বদলি না হয়ে বরং নিজ নিজ মন্ত্রণালয়ে অর্জিত অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে মন্ত্রণালয়ের নীতিনির্ধারণের চূড়ান্ত পর্যায় পর্যন্ত অবদান রাখবে। ব্যয় বাজেটে সীমিত সম্পদ বণ্টনকালে আমজনতার সুযোগ-সুবিধা বাড়ানোর, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিতকরণের ওপর জোর দিতেন প্রবাদপ্রতিম এ হিসাববিজ্ঞানী বর্ষীয়ান রাজনীতিবিদ। তার রাজনৈতিক অর্থনীতির কল্যাণ দর্শন, বাংলাদেশের ইতিহাসে সর্বোচ্চ ১২টি বাজেট প্রদানের কৃতিত্বের অধিকারী তিনি, বারো বাজেট বক্তৃতায় (সংকলিত) পাওয়া যাবে। নব্বইয়ের দশকের প্রথমার্ধে আর্থিক খাত সংস্কারসহ সামাজিক নিরাপত্তাসহ জনকল্যাণমুখী বহু পদক্ষেপ বা প্রথা প্রবর্তন করেছিলেন তিনি।
১৯৯৫ সালে প্যারিসে অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন সংস্থার (ওইসিডি) উদ্যোগে এইড হারমোনাইজেশন, এইড ইফেকটিভনেস অ্যান্ড রেজাল্টস বিষয়ের ওপর চূড়ান্ত ঘোষণা যা প্যারিস ডিক্লারেশন-২০০৫ নামে খ্যাত, আমি এর খসড়া প্রণয়ন কমিটিতে এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল থেকে প্রতিনিধি সদস্য ছিলাম। ফ্রান্স সরকার ৯০টি দেশের অর্থমন্ত্রীদের দাওয়াত করেছিলেন প্যারিস ডিক্লারেশন ঘোষণায় উপস্থিত থাকার জন্য। আমি প্যারিসে পৌঁছার তিনদিন পর ইআরডি সচিব ইসমাইল জবিউল্লাহ এবং অর্থমন্ত্রী মহোদয় আসেন মিনিস্টারিয়াল মিটিংয়ে যোগ দিতে, প্লেনারি এক অধিবেশনে বাংলাদেশের অর্থমন্ত্রী সভাপতিত্ব করেন। প্লেনারি মিটিং শেষে মন্ত্রী মহোদয় বললেন, হোস্ট গভার্নমেন্ট আমাদেরও বিশেষ লাঞ্চে দাওয়াত দিয়েছে, সেখানে আমাকে নিয়ে চলো। একটা বিরাট হলের ফ্লোরে সবাই সমবেত, অনেক কাউন্টার থেকে অল্পস্বল্প কুকিজ জাতীয় জিনিস বারবার এনে শুভাশীষ বসু (প্যারিসে আমাদের কমার্শিয়াল কাউন্সেলর) আমাদের দিচ্ছিল। স্যার এগুলোকে অনেকটা অ্যাপিটাইজার/স্টার্টার মনে করে খাচ্ছিলেন আর এদিক-ওদিক তাকাচ্ছিলেন।
ভাবছিলেন, এই বুঝি ফরমাল সিটিং লাঞ্চ শুরু হবে, ৯০টি দেশের অর্থমন্ত্রীদের সম্মানে দেয়া ফ্রান্স সরকারের মধ্যাহ্নভোজ। আনুষ্ঠানিক কোনো কিছু না দেখে আমাকে জানতে বললেন কখন লাঞ্চ সার্ভ হবে। শুভাশীষের কাছে জানতে চাইলাম, সে বলল, স্যার এখন যা পাচ্ছেন বা খাচ্ছেন এটাই লাঞ্চ। শুনে আমার চক্ষু চড়কগাছ। কথায় আছে না, অল্প শোকে কাতর, অধিক শোকে পাথর। স্যারকে কীভাবেই-বা বলি। বলতেই হলো। স্যার শুনে আমাকে বললেন, দেখো এখান থেকে একটু শেখো। আজ ঢাকায় ৯০ জন না নয়জন অর্থমন্ত্রী যদি আসত, তাদের মধ্যাহ্নভোজ আয়োজনের জন্য তুমি কত টাকার বাজেট করতে ভেবে দেখো। স্যার হতাশ হয়ে হোটেলে ফিরলেন। সন্ধ্যায় রাষ্ট্রদূত তোফায়েল করিম হায়দার আমাদেরকে হোটেলে নৈশভোজে আমন্ত্রণ জানালেন। শুভাশীষ আবার ভুল করে অন্য এক পথ দিয়ে হোটেলে নিতে গিয়ে দেরি করে ফেলল। এপিএস কাইয়ুম চৌধুরী প্রমাদ গুনলেন। বললেন, দুপুরে লাঞ্চের নমুনায় স্যার বেশ আফসেট, এখন ডিনারে না জানি কী হয়। হোটেলে পৌঁছে জানা গেল ফরমালি ডিনার সার্ভ হতে প্রায় ৪৫-৫৫ মিনিট সময় লাগবে। স্যার বললেন, আমাকে আপাতত এখনই সালাদজাতীয় কিছু দেয়া হোক। দেয়া হলো বড় এক প্লেট লেটুস শাকপাতা। ড্রেসিং মিশিয়ে স্যার আমাদেরও তার থেকে ভাগ দিয়ে আন্তরিক হলেন আমাদের সঙ্গে। আমরা আপ্লুত হলাম। ভয় কেটে গেল। সে রাতে অনেকক্ষণ তার সঙ্গে ছিলাম, আমার সঙ্গে শেয়ার করলেন স্বনির্ভর বাংলাদেশ অর্থনীতি গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার চিন্তাভাবনা। জানালেন, সরকারে তার রাজনৈতিক সহকর্মীদের চিন্তাচেতনার দূরত্ব ও দৌরাত্ম্য এবং তাদের পরবর্তী প্রজন্মের প্রগলভতা মোসাহেবি দৃষ্টিভঙ্গি, স্বার্থান্ধতার কথা।
এম সাইফুর রহমানের কর্মভাবনায় ১৯৯০ দশকের গোড়ার দিকে বিশ্বব্যাংক ও আইএমএফ সমর্থিত কাঠামোগত সংস্কারের অংশ হিসেবে বাংলাদেশে বাণিজ্য ও আর্থিক কর্মসূচিতে উদারনীতি বাস্তবায়ন শুরু হয়। এ সময় সামষ্টিক অর্থনৈতিক ভারসাম্যহীনতার বিরুদ্ধে উদার বাজারমুখী নীতি গ্রহণ ছিল একটি বড় নীতিগত পরিবর্তন। আংশিকভাবে বৈদেশিক সাহায্য হ্রাসের কারণে এবং দেশের বাণিজ্য শর্তে পরিবর্তনের কারণে কিছুটা ভারসাম্যহীন অবস্থা সৃষ্টি হয়। ১৯৯৪ সালের মার্চে চলতি হিসাবকে রূপান্তরযোগ্য করা এবং ২০০৩ সালের জুনে ভাসমান বিনিময় হার ব্যবস্থা গ্রহণ করা ছিল আইএমএফের কাঠামোগত সমন্বয় কর্মসূচির অংশ।
তার আমলে বাংলাদেশ প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, পাবলিক ফাইন্যান্স ম্যানেজমেন্ট, প্রাইমারি এডুকেশন ডেভেলপমেন্ট, পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বাস্তবায়নে সংস্কার নীতি গ্রহণ করা হয়। তার দূরদৃষ্টিসম্পন্ন পদক্ষেপের ফলে সামষ্টিক অর্থনৈতিক সংস্কারের আশার আলো দেখা দেয়। এটি ছিল সংসদীয় গণতন্ত্রের সঙ্গেও সামঞ্জস্যপূর্ণ। ১৯৯০-এর দশকের সংস্কারগুলো আর্থিক ও বহির্বাণিজ্য ঘাটতিকে একটি গ্রহণযোগ্য হারে কমাতে সাহায্য করে, যা সাহায্য প্রাপ্তির শর্তের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সুতরাং মোট জাতীয় আয়ের শতকরা হিসাবে বিদেশী সাহায্য কমানোর সঙ্গে সঙ্গে সঞ্চয় ও বিনিয়োগ বৃদ্ধি পেতে থাকে।
একই সময় জাতীয় দারিদ্র্য হ্রাস কৌশল দারিদ্র্য বিমোচনের রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য চারটি কৌশলগত সীমানা নির্ধারণ এবং বাস্তবায়ন শুরু সম্ভব হয়েছিল: ক. দরিদ্র জনগোষ্ঠীর অনুকূল কর্মকাণ্ড বাড়ানো খ. দরিদ্রপন্থী অর্থনৈতিক বৃদ্ধির জন্য সংকটাপন্ন খাতগুলোয় বরাদ্দ বাড়ানো গ. কার্যকর নিরাপত্তা ব্যবস্থা ও লক্ষ্যভিত্তিক প্রোগ্রাম তৈরি করা এবং ঘ. সামাজিক উন্নয়ন নিশ্চিত করা। চারটি কৌশলগত সীমার মধ্যে প্রথম তিনটি অর্থনৈতিক খাতকে দারিদ্র্য বিমোচনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করার জন্য প্রয়োজন ছিল। ১৯৯১-৯৫ সময়কালে বাংলাদেশে আর্থসামাজিক ও প্রশাসনিক খাতে বেশকিছু সংস্কার কার্যক্রম ও প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলা হয়—পরিবেশ আইন পাস; সংশোধিত শিল্পনীতি ঘোষণা; বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন, সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন গঠন; প্রাইভেটাইজেশন বোর্ড প্রতিষ্ঠা; সাউথ এশিয়া প্রেফারেন্সিয়াল ট্রেড অ্যারেঞ্জমেন্ট (সাফটা) প্রতিষ্ঠা, ফাইন্যান্সিয়াল ইনস্টিটিউশন অ্যাক্ট; বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা প্রবর্তন; প্রথম সেলুলার ফোন পদ্ধতি চালু; কোম্পানি আইন সংশোধন; টাকাকে চলতি হিসাবে লেনদেনের জন্য রূপান্তরযোগ্য ঘোষণা; বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক অর্থ তহবিলের ৮ নং আর্টিকেলের মর্যাদাপ্রাপ্তি; আর্থিক প্রতিষ্ঠান সমূহ আইন জারি; পেট্রোলিয়াম অ্যাক্ট পাস; মহিলাবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে শিশুবিষয়ক কার্যক্রম সংযুক্ত।
১৯৯৫ সালেই উল্লেখযোগ্য কিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল, যথা ইন্টারন্যাশনাল চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি ইন বাংলাদেশ (আইসিসিবি) গঠন, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ চালু, অকৃষি খাসজমি ব্যবস্থাপনা ও বন্দোবস্ত নীতিমালা জারি, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের পাওয়ার সেল গঠন, বাংলাদেশ পরিবেশ সংরক্ষণ আইন পাস, গ্যাসাধার বিধিমালা এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (ডব্লিউটিও) প্রতিষ্ঠা।
২০০১-০৬ সময়কালে বাংলাদেশ ব্যাংক আইন সংশোধন, বাংলাদেশ ব্যাংক (জাতীয়করণ) আদেশ-১৯৭২ এবং ব্যাংক কোম্পানি আইন-১৯৯১-এর সংশোধন, ব্যাংক রেট ৬ থেকে ৫-এ হ্রাস, মধ্যমেয়াদি সামষ্টিক অর্থনৈতিক কাঠামো গ্রহণ এবং অথনৈতিক প্রবৃদ্ধি, দারিদ্র্য নিরসন ও সামাজিক উন্নয়ন কৌশল গ্রহণের ফলে প্রত্যাশিত সংস্কার কার্যক্রম সফলভাবে বাস্তবায়ন করা গেলে বিশ্বব্যাংক Development Support Credit (DSC) কর্মসূচির আওতায় ২০০৫-০৬ অর্থবছর নাগাদ বাংলাদেশকে ১ হাজার ৫০০ মিলিয়ন ডলার উন্নয়ন সহায়তা এবং আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ) ২০০৫-০৬ অর্থবছর নাগাদ ৫১০ মিলিয়ন ডলার উন্নয়ন ও দারিদ্র্য নিরসন সহায়তা দেবে মর্মে চুক্তি স্বাক্ষর হয়েছিল। এছাড়া তার সময়ে পাবলিক প্রকিউমেন্ট রেগুলেশন কার্যকর, অর্থঋণ আদালত আইন কার্যকর, এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন অ্যাক্ট পাস, দ্য চিটাগং হিল ট্রাক্টস রেগুলেশন অ্যামেন্ডমেন্ট অ্যাক্ট প্রণয়ন, প্রাথমিক শিক্ষা উন্নয়ন কর্মসূচি-২ চালু হয়।
এ সময়েই মানব উন্নয়নসংক্রান্ত ইউঅ্যান্ডডিপির প্রতিবেদন বাংলাদেশের মধ্যম পর্যায়ের দেশ হিসেবে স্থান লাভ করে। ২০০৪ সালে নতুন আমদানি নীতি ২০০৩-০৬ অনুমোদন, বাণিজ্য নীতি (২০০৩-০৬) ঘোষণা, রফতানি নীতি ২০০৩-০৬ প্রণয়ন, ৫ হাজার টাকা পর্যন্ত কৃষিঋণের সুদ মওকুফ ঘোষণা, কৃষি কর্মপরিকল্পনা গ্রহণ, বিএডিসির ক্ষুদ্র সেচ কার্যক্রম জোরদার, রেলওয়ের কার্যক্রম বৃদ্ধির লক্ষ্যে বিশেষ বরাদ্দ ও প্রকল্প গ্রহণ, জাতীয় সংসদে নারী প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিতকরণে আইন পাস, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন প্রণয়ন, র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন গঠনসহ স্বাস্থ্য, পুষ্টি ও জনসংখ্যা সেক্টর কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছিল। বাংলাদেশ ওজোন স্তর ক্ষয় (নিয়ন্ত্রণ) বিধিমালা জারি, সিএনজি ও এলপি গ্যাস বিধিমালা জারি, পদ্মা সেতু নির্মাণের ফিজিবিলিটি স্টাডি সমাপ্ত এবং স্থান নির্ধারণ, ইপিজেড ওয়ার্কার্স অ্যাসোসিয়েশন অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল রিলেশনস অ্যাক্ট পাস, আর্সেনিক সমস্যা সমাধানে জাতীয় নীতিমালা প্রণয়ন, পারস্পরিক বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক সহযোগিতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে সার্ক সদস্যভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে এসএএফটিএ চুক্তি স্বাক্ষর এবং সামাজিক বনায়ন বিধিমালাও প্রণয়ন হয়েছিল তার সময়ে।
তার অবসরে, বিশেষ করে গত ১৬ বছরে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সব উন্নয়নের প্রেক্ষাপট বড্ড বেশি একদেশদর্শিতার ডামাডোলে প্রক্ষেপণকালে এম সাইফুর রহমান এবং তার সরকারের ভূমিকা ও সফলতা চিন্তাচেতনার চৌহদ্দির বাইরে নিক্ষেপের প্রয়াস চলে।
ড. মোহাম্মদ আবদুল মজিদ: সাবেক সচিব ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের
সাবেক চেয়ারম্যান