কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

স্টারলিংক এলো বলে

শিগগিরই দেশে স্টারলিংকের স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা চালুর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এখনো আনুষ্ঠানিক ঘোষণা আসেনি, তার আগেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে বিভিন্ন ধরনের গুঞ্জন। সেবাটির সুবিধা-অসুবিধার বিস্তারিত জানাচ্ছেন এস এম তাহমিদ । সূত্র : কালের কণ্ঠ, ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৫

স্টারলিংক এলো বলে

স্টারলিংকের যাত্রা শুরু ২০১৮ সালে। তখন থেকেই প্রযুক্তিপ্রেমীদের মধ্যে এ নিয়ে আগ্রহের শেষ নেই। বাংলাদেশে এই সেবা চালুর বিষয়ে সরকারি নীতিমালা প্রণয়নে কাজ চলছে দেড় বছর ধরে। গত বছর অক্টোবরে নীতিমালার খসড়া প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)। 

 

দ্রুতই বাংলাদেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে যাচ্ছে স্টারলিংক। এরইমধ্যে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ডক্টর মুহাম্মদ ইউনূস ও স্টারলিংকের কর্ণধার ইলন মাস্কের মধ্যকার কথোপকথনে এই প্রচেষ্টার ইতিবাচক ইঙ্গিত মিলেছে।

 

যেভাবে কাজ করে স্টারলিংক

উপগ্রহের মাধ্যমে সরাসরি মহাকাশ থেকে তারহীন ইন্টারনেট সেবা দেয় স্টারলিংক। প্রায় সাত হাজার উপগ্রহ আছে এই প্রতিষ্ঠানের। প্রতিনিয়তই বাড়ছে এর সংখ্যা। স্টারলিংক ব্যবহারের জন্য রিসিভার ডিভাইস কিনতে হয় গ্রাহকদের। খোলা আকাশের নিচে, নিকটস্থ স্যাটেলাইটের দিকে তাক করে বসাতে হয় অ্যান্টেনা। এরপর রিসিভার ডিভাইসের সঙ্গে ওয়াই-ফাই রাউটার সংযুক্ত করলেই পাওয়া যায় উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা। স্যাটেলাইট টিভি আর স্টারলিংকের রিসিভারের মধ্যে তেমন তফাত নেই। স্টারলিংকের অ্যান্টেনা তেমন বড় নয়, চাইলে গাড়ির ছাদেও বসানো সম্ভব।

 

স্টারলিংকের বিষয়ে দুটি ভ্রান্ত ধারণা বেশ প্রচলিত। একটি হচ্ছে, এর মূল আপলিংক বা ইন্টারনেট গেটওয়ের অবস্থান ও নিয়ন্ত্রণ থাকে প্রতিষ্ঠানটির হাতে। বাস্তবতা হচ্ছে, প্রতিটি দেশের নিজস্ব ইন্টারনেট আপলিংক ব্যবহার করে স্টারলিংক এবং তা সেসব দেশের নীতিমালা অনুযায়ী নিয়ন্ত্রিত। আরেকটি ভ্রান্ত ধারণা, মোবাইল ইন্টারনেটের মতো স্টারলিংকও চলার পথে ব্যবহার করা যায়। বেশির ভাগ প্যাকেজে স্টারলিংক এ সুবিধা দেয় না। আর অ্যান্টেনা স্থির না থাকলে স্যাটেলাইটের সঙ্গে যোগাযোগ বাধাগ্রস্ত হতে পারে। তাই চলন্ত বাহনে এর ব্যবহার নিরুৎসাহ করে স্টারলিংক। 

 


 

সেবার গতি ও মান

স্যাটেলাইট ইন্টারনেটের সবচেয়ে বড় সুবিধা, প্রত্যন্ত জায়গায়ও তা ব্যবহার করা যায়। তবে এই সেবার সবচেয়ে বড় সমস্যা হচ্ছে লেটেন্সি। অন্যান্য স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবার তুলনায় স্টারলিংকের লেটেন্সি কম। বেশির ভাগ ব্যবহারকারী জানিয়েছেন, তাঁদের ইন্টারনেট লেটেন্সি ২০ থেকে ৫০ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে, তবে কিছু এলাকায় তা ১০০ মিলিসেকেন্ড পর্যন্ত হতে পারে, যেখানে ফাইবার ইন্টারনেটের লেটেন্সি ১ থেকে ৫০ মিলিসেকেন্ডের মধ্যে থাকে। তবে গতিতে স্টারলিংক অনেকটাই এগিয়ে, ২৩ থেকে ১০০ মেগাবিট পর্যন্ত উচ্চগতির ইন্টারনেট সেবা পাওয়া যাবে। কিছু স্থানে ২২০ মেগাবিট পর্যন্তও ডাউনলোড স্পিড পাওয়া সম্ভব। তবে আপলোডের গতি ৫০ মেগাবিটের বেশি পাওয়া যাবে না।

 

বিটিআরসির নীতিমালা যা বলছে

স্যাটেলাইট ইন্টারনেট সেবা লাইসেন্স ও নীতিমালা নিয়ে বিটিআরসি কাজ শুরু করেছে ২০২৩ সালের শেষ থেকে। এরপর স্টারলিংকের একটি প্রতিনিধিদল ২০২৪ সালের অক্টোবরে ঢাকায় এসে দেখা করে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (বিডা) নির্বাহী চেয়ারম্যান চৌধুরী আশিক মাহমুদ বিন হারুনের সঙ্গে। সে মাসেই একটি খসড়া নির্দেশিকা প্রস্তুত করে বিটিআরসি, যার নাম নন-জিওস্টেশনারি অরবিট (এনজিএসও) স্যাটেলাইট সার্ভিস অপারেটর। খসড়া নির্দেশিকাটি প্রকাশের পরপরই বেশ কিছু বিশেষজ্ঞ ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, আড়ি পাতা পদ্ধতি বহাল রেখেই দেশে স্যাটেলাইটভিত্তিক ইন্টারনেট সেবা চালু করতে চাইছে সরকার। এতেও ব্যবস্থা রাখা হবে ন্যাশনাল টেলিকমিউনিকেশন মনিটরিং সেন্টারকে (এনটিএমসি) তথ্য দেওয়ার।

 

 

সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানকে মেনে চলতে হবে সরকারের জারি করা আদেশ, যার মধ্যে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করাও পড়ে। গত বছর ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত খসড়ার বিষয়ে জনমত গ্রহণ করেছে বিটিআরসি। তবে বর্তমান সরকারের গৃহীত নীতিমালায় ইন্টারনেটকে অতি প্রয়োজনীয় সেবার কাতারে রাখা হয়েছে। তাই অন্তত হুট করে ইন্টারনেট বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা নেই। সেটি অবশ্য স্যাটেলাইট এবং ব্রডব্যান্ড দুটি সেবার ক্ষেত্রেই প্রযোজ্য। এ ছাড়া লাইসেন্সধারী প্রতিষ্ঠানকে টেলিকম আইন ২০০১, সাইবার সুরক্ষা অধ্যাদেশ ২০২৫, ওয়্যারলেস টেলিগ্রাফি আইন ১৯৩৩ ও টেলিগ্রাফ আইন ১৮৮৫ মেনে চলতে হবে। পাশাপাশি মানতে হবে রেগুলেটরি কমিশন ও সংসদ দ্বারা গৃহীত যেকোনো অধ্যাদেশ, নীতি ও সিদ্ধান্ত।

 

কবে আসতে পারে

স্পেনের বার্সেলোনায় ৩ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে মোবাইল ওয়ার্ল্ড কংগ্রেস। টেলিকম শিল্প সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা জানিয়েছেন, সেখানে স্টারলিংক ইন্টারনেট সেবা পরিচালনার বিষয়ে স্পেসএক্সের সঙ্গে মোবাইল অপারেটর বাংলালিংকের একটি চুক্তি স্বাক্ষরের সম্ভাবনা রয়েছে। বাংলালিংকের মূল প্রতিষ্ঠান দুবাইভিত্তিক টেলিযোগাযোগ কম্পানি ভিওন লিমিটেড এরমধ্যেই স্টারলিংকের সঙ্গে মিলিতভাবে বাংলাদেশে পরিষেবা পরিচালনার বিষয়ে পরীক্ষা চালাচ্ছে। বাংলালিংকের লক্ষ্য, প্রচলিত টেরেস্ট্রিয়াল নেটওয়ার্ক স্থাপন অসম্ভব এমন এলাকাগুলোতে সংযোগ বাড়ানো। চুক্তিটি সই হওয়ার পর জানা যাবে কবে নাগাদ সেবাটি চালু হতে পারে।

 

 

খরচাপাতি

গ্রাহক পর্যায়ে স্টারলিংকের রিসিভিং ডিভাইস এবং সেবা ব্যবহারের মূল্য দেশভেদে আলাদা করে নির্ধারিত হয়। এ বিষয়ে অ্যাসোসিসেশন অব মোবাইল টেলিকম অপারেটরস অব বাংলাদেশের মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার মন্তব্য করেছেন, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে ন্যায্য মূল্যে ইন্টারনেট সেবা দিচ্ছে স্টারলিংক, বাংলাদেশেও হয়তো তার ব্যতিক্রম হবে না। তবে মূল্য নির্ধারণের পূর্ণ ক্ষমতা স্টারলিংকের, সেখানে সরকারের সরাসরি হস্তক্ষেপের সুযোগ নেই।

 

 

যুক্তরাষ্ট্রে স্টারলিংক ডিভাইসের মূল্য ৩৪৯ ডলার (৪২ হাজার ৪০০ বাংলাদেশি টাকা) থেকে শুরু। প্রতি মাসে ইন্টারনেট ব্যবহারের ফি শুরু ১২০ ডলার (১৪ হাজার ৬০০ বাংলাদেশি টাকা) থেকে। বাংলাদেশেও যদি একই মূল্যে ডিভাইস কেনা ও সংযোগ গ্রহণ করতে হয়, তাহলে উপকৃত হবেন খুব কম ব্যবহারকারী। আফ্রিকার কিছু দেশে মাসিক ফি মাত্র ১০ ডলার (এক হাজার ২০০ টাকা) থেকে ৩০ ডলারের (তিন হাজার ৬০০ টাকা) মধ্যে। ভুটানে মাসিক ফি তিন হাজার ভুটানি উলট্রুম (চার হাজার ২০০ বাংলাদেশি টাকা)। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে বাংলাদেশের ব্যবহারকারীরাও এ ধরনের রেট আশা করতে পারেন।