প্রবৃদ্ধিতে দক্ষিণ এশিয়ায় পেছনে বাংলাদেশ!
গোবিন্দ শীল । সূত্র : দেশ রূপান্তর, ২৩ জানুয়ারি ২০২৫

বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর থেকেই আমলাতান্ত্রিক-কেন্দ্রিক উন্নয়ন মডেলে দেশে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বেড়েছে রকেটের গতিতে। ধনী হয়েছে আরও ধনী। আর গরিবের পায়ের নিচে মাটি নেই। মাঝে বেসরকারি বিনিয়োগ ও অর্থনৈতিক কিছু উদ্যোগের কারণে দরিদ্র লোকের সংখ্যা কমে এলেও সার্বিক পরিস্থিতি অনেকটা খারাপের দিকে যাচ্ছে। আওয়ামী লীগের ১৫ বছরের শাসনের বেশির ভাগ সময় সুশাসন ও জবাবদিহির অভাবে অর্থনীতির ওপর চাপ পড়েছে পর্বতসম। দেশে ২০২৪ সালের মাঝামাঝি সময় রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে অর্থনৈতিক কার্যকলাপ কমে যায় বলে বিনিয়োগকারীদের আস্থাও যথেষ্ট হ্রাস পায়।
জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৪ সময়কালে প্রবৃদ্ধি ৫ শতাংশে নেমে আসে। জ্বালানির ঘাটতি, আমদানি সীমিতকরণ এবং কাঁচামাল সরবরাহের সীমাবদ্ধতার কারণে শিল্পপণ্যের উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে আর মূল্যস্ফীতি অনেক বেড়ে গেছে। উচ্চ মুদ্রাস্ফীতি পরিবারগুলোর ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস করেছে এবং সেবা খাতের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিয়েছে। চলতি বছরে দেশে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে ৪.১ শতাংশ বলে মনে করছে বিশ্বব্যাংক। মোট উৎপাদন ডলারের হিসাবে হতে পারে প্রায় ৪৬৪ বিলিয়ন, যা ২০২৬ সালে প্রায় ৪৯৯ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত হতে পারে (tradingeconomics.com-এর হিসেবে)।
তবে বিশ্বব্যাংক আশা প্রকাশ করে বলেছে, দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর প্রবৃদ্ধি ২০২৫-২৬ সালে গড়ে ৬.২ শতাংশ হবে। বিশেষত ভারতে অর্থনৈতিক কর্মচাঞ্চল্য আশাব্যঞ্জকভাবে ভালো থাকবে। আর অন্যান্য দেশের জন্য গড়ে বছরে ৪.২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি প্রক্ষেপণ করা হয়েছে। ভারতের প্রবৃদ্ধি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে ৮.২ শতাংশ থেকে (এপ্রিল ২০২৪ থেকে মার্চ ২০২৫ সময়ে) ৬.৫ শতাংশে হ্রাস পাবে বলেও আশঙ্কা করছে বিশ^ব্যাংক। বলছে, বিনিয়োগে মন্দা এবং উৎপাদন হ্রাস পাওয়া এ জন্য দায়ী।
কে কেমন করছে?
সাম্প্রতিক বছরের প্রবৃদ্ধি সংকোচনের পর পাকিস্তান ও শ্রীলঙ্কায় আবার বেড়েছে। পাকিস্তানে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৪) প্রবৃদ্ধি ২.৫ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। উন্নত আবহাওয়ার কারণে সেখানে কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধি পেয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে সাধারণ নির্বাচনের পর আমদানি নিয়ন্ত্রণ তুলে নেওয়া এবং রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা হ্রাসের কারণে শিল্প উৎপাদনও বৃদ্ধি পেয়েছে। এই ধারা চলতে থাকলে পাকিস্তানের প্রবৃদ্ধি ৩ শতাংশে উন্নীত হতে পারে। আর আগামী বছর তা ৪ শতাংশে পৌঁছাতে পারে।
তাদের মোট উৎপাদনের বাজারমূল্য দাঁড়াবে প্রায় ৩৫০ বিলিয়ন ডলারে। এদিকে শ্রীলঙ্কায় দুই বছরের উল্লেখযোগ্য সংকোচনের পরে গত বছরে জিডিপি ৪.৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। মুদ্রানীতি সংশোধন করার কারণে এবং মুদ্রাস্ফীতির চাপ কমাতে সক্ষম হওয়ায় সেখানে দ্রুতই সামষ্টিক অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা এসেছে। এতে করে শিল্প ও পরিষেবা খাতের প্রবৃদ্ধি আগের ধারণার চেয়ে বেশি হয়েছে। এ বছর শ্রীলঙ্কার প্রবৃদ্ধি ৩.৫ শতাংশ হবে বলে মনে করা হচ্ছে। মোট উৎপাদনের পরিমাণ দাঁড়াবে প্রায় ৮৫ বিলিয়ন ডলার। হিমালয়ের পাদদেশ নেপালের প্রবৃদ্ধি ২০২৩-২৪ অর্থবছরে (২০২৩ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি থেকে ২০২৪ সালের জুলাইয়ের মাঝামাঝি) ৩.৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে।
চলতি বছরে এটি বেড়ে হতে পারে ৫ শতাংশ আর মোট উৎপাদনের পরিমাণ হবে প্রায় ৪৮ বিলিয়ন ডলার। এটি সম্ভব হচ্ছে মূলত পানি বিদ্যুতের উৎপাদন বৃদ্ধি, পরিবহন ও আতিথেয়তা শিল্প খাত ঘুরে দাঁড়ানোর কারণে। ভুটানের অর্থনৈতিক অবস্থা আরও ভালো হয়েছে আলোচ্য সময়ে। জুলাই ২০২৩ থেকে জুন ২০২৪ সময়কালে ভুটানে আনুমানিক প্রবৃদ্ধি ৫.৩ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এটি সম্ভব হয়েছে পর্যটনভিত্তিক ও অন্যান্য সেবা রপ্তানি যথেষ্ট ভালো হওয়ার কারণে। পাশাপাশি কৃষির উৎপাদনও যথেষ্ট অবদান রেখেছে অর্থনীতিতে।
এ বছর তাদের জিডিপি প্রবৃদ্ধি ৭ শতাংশ হবে বলে বিশ্বব্যাংক হিসাব কষে বলছে। নানা কারণে আফগানিস্তানের প্রবৃদ্ধি এ বছর থেমে থাকবে। জিডিপি বাড়বে ২.৫ শতাংশ হারে। চলতি অর্থবছরে ভারত বাদে এশিয়ার অন্য দেশগুলোতে গড় প্রবৃদ্ধি ৪ শতাংশ এবং ২০২৬ সালে ৪.৩ শতাংশে উন্নীত হবে বলে আশা করছে বিশ^ব্যাংক। এ বছরের প্রবৃদ্ধি পূর্বাভাস বিশ্বব্যাংকের জুন পূর্বাভাসের তুলনায় কিছুটা কম হয়েছে মূলত বাংলাদেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতির কারণে।
আগের সরকারের দুর্নীতি ভোগাবে আমাদের
বাংলাদেশের অর্থনীতিতে দুর্নীতির অনেক ক্ষতিকর প্রভাব রয়েছে, যা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি, উন্নয়ন এবং সামগ্রিক সামাজিক কল্যাণকে যথেষ্ট ক্ষতিগ্রস্ত করে চলেছে। এটি প্রথমত বাজার ব্যবস্থার বিকৃতি ঘটিয়েছে। স্বজনপ্রীতি ও ঘুষ লেনদেনের কারণে যোগ্য মানুষ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ পদ থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অল্প যোগ্য লোক দিয়ে কাজ করাতে গিয়ে অর্থনীতির ওইসব খাতে উৎপাদনশীলতা কমে গেছে, যা অবশেষে দেশের প্রবৃদ্ধি কমিয়ে দিচ্ছে। ঘুষ দিয়ে কোনো কর্মকর্তাকে বিশেষ কোনো পণ্য আমদানির অনুমতি নিলে বা দেশে কোনো পণ্যের ফ্যাক্টরি খুললে তাতে পণ্যের মূল্য বেড়ে যায়।
ঘুষের টাকা তুলে আনতে ওই পণ্যের দাম বাড়ানোর ফলে বাজারে মূল্যস্ফীতি দেখা দিতে পারে। এতে পণ্যের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়, যা কিনা সাধারণ মানুষেরা বহন করেন। দুর্নীতি বাংলাদেশে গত এক যুগেরও বেশি সময় ধরে একটি অনাকাক্সিক্ষত ব্যবসায়িক পরিবেশ তৈরি করে রেখেছে। ফলে এখানে বিদেশি এবং দেশীয় বিনিয়োগকারীরা নিরুৎসাহিত বোধ করছেন। বিনিয়োগকারীরা স্বচ্ছ এবং স্থিতিশীল আর্থ-রাজনৈতিক অবস্থা পছন্দ করেন। দুর্নীতির কারণে সরকারি রাজস্ব কমে যায়। রাজস্ব কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে ঘুষ দিয়ে কর ফাঁকির ঘটনা বাংলাদেশে প্রবল মাত্রায় বিরাজমান।
এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে যাতে রাজস্ব খাতে দুর্নীতি বন্ধ করা যায়, সরকারকে সেই উদ্যোগ নিতে হবে। তাতে করে সরকারি কোষাগারের স্বাস্থ্য ভালো হবে, বিদেশ থেকে ঋণ নিতে হবে কম। নানা খাতে, বিশেষত ইউটিলিটি ও মেগা প্রকল্প খাতে ঘুষের কারণে সরকারি রাজস্ব যথেষ্ট বাড়ছে না। অথচ ওই ঘুষের টাকা সরকার পেলে তা দিয়ে উন্নয়নমূলক বা সেবামূলক অনেক কাজ করা সম্ভব। দুর্নীতি সরকারি প্রতিষ্ঠান ও সামগ্রিক শাসনব্যবস্থাকে দুর্বল করে দিয়েছে। এতে করে সরকারি প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের আস্থা অনেকটাই কমে গেছে। এখন অন্তর্বর্তী সরকারকে সংস্কার, সরকারের আকার ছোট করা ও গতিশীল কাজের মাধ্যমে আমলা ও সরকারের প্রতি আস্থা ফিরিয়ে আনতে হবে।
দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বেড়ে গেছে
দুর্নীতির শিকড় সমাজের এত ভেতরে প্রবেশ করেছে যে, এটি দেশে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছে। ইউএনডিপি গত অক্টোবরে এক রিপোর্টে উল্লেখ করেছে, বাংলাদেশে প্রায় চার কোটি ১৭ লাখ মানুষ চরম দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাস করছেন। শুধু তাই নয়, দুর্নীতির কারণে দেশে ধনী এবং গরিবের মধ্যে আয়বৈষম্যকেও বাড়িয়ে দিয়েছে। জাতিসংঘসহ বাংলাদেশে যেসব আন্তর্জাতিক উন্নয়ন সংস্থা কাজ করে, তারা যৌথভাবে ‘সমন্বিত খাদ্যনিরাপত্তার পর্যায় চিহ্নিতকরণ’ শীর্ষক এক জরিপে উল্লেখ করেছে যে, দেশের ২ কোটি ৩৬ লাখ বা ২৬ শতাংশ মানুষ উচ্চমাত্রার খাদ্যসংকটে রয়েছেন।
এ বছরের ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত এরা বিপদে থাকতে পারে। তাদের মধ্যে মিয়ানমার থেকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া তিন লাখ রোহিঙ্গাও রয়েছে। দুর্নীতির ব্যাপকতা ও তীব্র মাত্রার কারণে সমাজে বিভিন্ন শ্রেণির নাগরিকদের মধ্যে এক অবিশ্বাস তৈরি হয়েছে। ক্ষয় হয়েছে সামাজিক পুঁজির। সাদামাটাভাবে বললে, সামাজিক পুঁজি হচ্ছে বিভিন্ন ব্যক্তি ও বর্গের মধ্যকার সম্পর্কের নেটওয়ার্ক। শুধু সামাজিক পুঁজি যে ক্ষয়িষ্ণু হয়েছে তা নয়, দুর্নীতির ফলে রাজস্ব ঘাটতি বেড়েছে, অনেক ব্যাংক দেউলিয়া হওয়ার উপক্রম হয়েছে।
অর্থসংকটে চলমান মেগা প্রকল্প
উৎখাত হওয়া আওয়ামী লীগ সরকার অগ্রাধিকারভিত্তিতে বাস্তবায়নের জন্য আটটি মেগা প্রকল্পকে ফাস্টট্র্যাক তালিকাভুক্ত করেছিল। বাস্তবায়নের জন্য এসব প্রকল্পে সর্বমোট ৩ লাখ ১৩ হাজার কোটি টাকার বরাদ্দ দেওয়া হয়। অর্থ সংকটের কারণে আড়াই বছর ধরে সরকারের বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়নে ধীরগতি দেখা দিলেও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত মেগা প্রকল্পগুলো তারা চালিয়ে গেছে। চলতি (২০২৪-২৫) অর্থবছরের এডিপিতে বরাদ্দের ক্ষেত্রেও ফাস্টট্র্যাক প্রকল্পগুলোকে অগ্রাধিকার দেওয়া হয়েছে। এগুলো শেষ করতে আরও ৭৭ হাজার কোটি টাকার অধিক ব্যয় করতে হবে। তবে অর্থনৈতিক বিশ্লেষকরা বলছেন, সংকুচিত প্রবৃদ্ধির মধ্যে বিশাল অঙ্কের এ অর্থ সরকারের জন্য বোঝা হয়ে দাঁড়াবে।
কী করতে হবে?
সরকারকে দ্রুত কিছু পদক্ষেপ নিতে হবে। বিভিন্ন খাতে ফাঁকি দেওয়া কর আদায় করতে হবে, ট্যাক্সের জাল প্রসারিত করে আয়কর বা ডাইরেক্ট ট্যাক্স বাড়াতে হবে। করপোরেট অর্থনীতিতে নানা অনিয়মের কারণে দেশ বছরে যে ৪০ কোটি ডলার বা ৪,৮০০ কোটি টাকা হারাচ্ছে, তা উদ্ধারের ব্যবস্থা করতে হবে। গরিব মানুষকে খাদ্য সহায়তা বাড়ালেই হবে না, তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে।
বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির যেসব প্রকল্প দেশের গ্রামাঞ্চলে কর্মসংস্থান করবে, সেগুলোর বাস্তবায়নে জোর দিতে হবে। প্রবাসী আয় যাতে না কমে তাই নানাবিধ প্রণোদনা প্রবাসীদের জন্য অব্যাহত রাখতে হবে, কৃষিতে ভর্তুকি কমানো যাবে না আর বেসরকারি খাতে বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য চেম্বারগুলোর সঙ্গে বসে আলোচনা করতে হবে। সরকারের আর্থিক ব্যবস্থাপনা ও রাজস্ব ব্যবস্থার সংস্কার করতে হবে, ছোট করতে হবে সরকারের আকার, দক্ষ করতে হবে আমলাদের। অর্থনীতির সব ক্ষেত্রে ডিজিটাল ব্যবস্থা, ডিজিটাল মনিটরিং অব্যর্থভাবে চালু করতে হবে।
আইএমএফের ঋণ থেকে প্রবাসীদের পাঠানো অর্থের পরিমাণ অনেক অনেক বেশি। তাই এই ঋণের মুখাপেক্ষী না হয়ে যারা দেশের বাইরে কাজের জন্য যাচ্ছেন, তাদের দক্ষতা বাড়ানোর ব্যবস্থা নিতে হবে। কম গুরুত্বপূর্ণ মেগা প্রকল্প আপাতত বন্ধ রেখে, ছোট ও মাঝারি শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ানো যেতে পারে। পর্যটন ও অন্যান্য আতিথেয়তার খাত প্রসারিত করতে হবে, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ খাতগুলোতে নতুন করে মনোযোগ দিতে হবে। দেশের প্রবৃদ্ধি হলেই হবে না, তাকে টেকসই করতে কল্যাণমুখী অর্থনীতির দিকে যেতে হবে, কমাতে হবে আয়বৈষম্য। সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচির প্রসার, জেলাভিত্তিক শিল্পগুলোতে অর্থায়ন, শস্য-ভূমি যাতে কমে না যায় সে জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। এগুলো আসলে একটি দীর্ঘমেয়াদি প্রক্রিয়া। তাই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে এই আলোচনাগুলো এখনই শুরু করতে হবে।