কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে কেন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না

বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকের বর্তমান আর্থসামাজিক অনিরাপত্তা বা ভঙ্গুর বিচারব্যবস্থা পূর্ববর্তী বিভিন্ন সরকারের আমলের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে কয়েক মাসের মধ্যে তা আমূলে পাল্টে ফেলা সম্ভব নয়। তবে যা সম্ভব তা হলো, এসব অপরাধ দমনে সদিচ্ছা, দৃশ্যমান প্রচেষ্টা ও উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা করা। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা গেল না কেন, তা নিয়ে লিখেছেন উম্মে ওয়ারা উম্মে ওয়ারা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ও গবেষক [প্রকাশ : প্রথম আলো, ১৩ জুলাই ২০২৫]

অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে কেন অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না

চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের এক বছর পর বর্তমান বাংলাদেশের সামাজিক-রাজনৈতিক পরিপ্রেক্ষিতে বিভিন্ন মৌলিক সংস্কার ও আসন্ন জাতীয় নির্বাচন নিয়ে সর্বাধিক রাজনৈতিক আলোচনা হলেও এই সময়ে সংঘটিত নানা ধরনের অপরাধ ও এর বিস্তৃতির কারণগুলোও আমলে নেওয়াও জরুরি ছিল।

 

 

কেননা, সরকারের প্রায় এক বছরের শাসনামলে বিশেষ কিছু অপরাধের মাত্রা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। এর মধ্যে নারী ও শিশুর প্রতি সহিংসতা ও মব–সন্ত্রাসের মতো অপরাধ সরাসরি ভুক্তভোগী ছাড়াও আতঙ্কে ফেলেছে সাধারণ জনগণকে। সহিংসতা–পরবর্তী এই বিশেষ সময়ে নানা অপরাধপ্রবণতা বিস্তৃতি রোধে বর্তমান সরকারের প্রতিক্রিয়া ও প্রচেষ্টাকে অপরাধবিজ্ঞানের লেন্সে দেখার চেষ্টা করেছি এই লেখায়।


২.

বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের মাসিক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে জুন মাসে ৭৩৬টি কন্যাশিশুসহ মোট ১ হাজার ৫৫৫ জন নারী নির্যাতনের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৩৪৫টি শিশুসহ ৪৮১ জন নারী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন। এর মধ্যে ৬২ শিশুসহ দলবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হয়েছেন ১০৬ জন নারী এবং ১০ শিশুসহ ধর্ষণের পর হত্যা করা হয়েছে ১৭ নারীকে।

 

গত ছয় মাসে ৬১ শিশুসহ হত্যার শিকার হয়েছেন ৩২০ জন নারী। শুধু তা–ই নয়, চলতি বছরের ছয় মাসে বাংলাদেশে যে পরিমাণ ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে; এই সংখ্যা ২০২৪ সালের পুরো বছরের চেয়ে অনেক বেশি। এ ছাড়া গত ছয় মাসে দেড় শতাধিক ধর্ষণের চেষ্টা হয়েছে। বলা বাহুল্য, প্রকৃত ভুক্তভোগীর সংখ্যা এর চেয়ে অনেক বেশি হবে।

 

কিন্তু অপরাধীরা শুধু নারী ও শিশুর ওপর সহিংস আক্রমণ চালিয়েই ক্ষান্ত হচ্ছে না। সম্প্রতি মুরাদনগর ও ভোলায় সংঘটিত ধর্ষণের দুটি ঘটনাই ঘটেছে পরিবারের সামনে। মুরাদনগরের ভুক্তভোগীর বিবস্ত্র ভিডিও সামাজিক যোগাযোমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ার পর, সুরক্ষা পাওয়ার পরিবর্তে নিজ গ্রাম ছাড়তে বাধ্য হন ভুক্তভোগী।

 

এ ধরনের একের পর এক লিঙ্গভিত্তিক অপরাধ সংঘটন প্রতিরোধে বা অপরাধীদের নিরুৎসাহিতকরণে অন্তর্বর্তী সরকার কতখানি কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পেরেছে, তা নিয়ে জনমনে প্রশ্ন জেগেছে।

 

যেমন ধরুন, গত মার্চ মাসে জারি করা ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন (সংশোধন) অধ্যাদেশ-২০২৫ ’-এ ধারা ২০(৯) ও ৩২(ক) সংযোজন করা হয়। ফলে ধর্ষণের মামলার ক্ষেত্রে ট্রাইবু৵নাল যদি উপযুক্ত মনে করেন, তবে অভিযুক্ত ব্যক্তির ডিএনএ নমুনা পরীক্ষা না করেই শুধু মেডিকেল সার্টিফিকেট ও পারিপার্শ্বিক সাক্ষ্যের ওপর ভিত্তি করে বিচারকাজ সম্পন্ন করা যাবে।

 

এটি সঠিক বিচারকাজে ও ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে অন্তরায় হতে পারে। কেননা, ডিএনএ পরীক্ষার ফল যেকোনো ধর্ষণের মামলায় অভিযুক্ত ব্যক্তির সংশ্লিষ্টতা প্রমাণে বা অপ্রমাণে বা খণ্ডনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

 

৩.

এ ছাড়া ২০২৫–এর অধ্যাদেশে বিভিন্ন ধারায় মৃত্যুদণ্ডের পুনরাবৃত্তি ঘটানো হয়েছে, যদিও মৃত্যুদণ্ড এই আইনে আগে থেকেই ছিল; কিন্তু বাংলাদেশে এমন কোনো গবেষণালব্ধ তথ্য পাওয়া যায়নি, যেখানে কোনো একটি অপরাধের শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড প্রণয়ন করার ফলে সেই অপরাধের মাত্রা দীর্ঘ মেয়াদে কমে এসেছে।

 

ধর্ষণের মতো একটি অপরাধ সংঘটনের রাজনৈতিক-অর্থনীতির নিয়ামকগুলো বিচার–বিশ্লেষণ করে, এর মাত্রা কমিয়ে আনার বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা হাতে নেওয়া যেত; কিন্তু তার পরিবর্তে জনতুষ্টিবাদী চিন্তাপ্রসূত মৃত্যুদণ্ড দিয়ে বা সাজার মাত্রা বাড়িয়ে ধর্ষণের মতো অপরাধ যে এতটুকুও হ্রাস পায়নি, তা আমরা ইতিমধ্যেই দেখতে পাচ্ছি।

 

এ ছাড়া ১ জুলাই অধিকতর সংশোধনকল্পে প্রণীত অধ্যাদেশের মাধ্যমে ২০০০ সালের ৬ নম্বর ‘আইনগত সহায়তা প্রদান আইন’-এ সংশোধন আনা হয়েছে। অধ্যাদেশটিতে ৯টি আইনের ধারা লিগ্যালএইড অফিসে মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

 

এগুলোর মধ্যে ‘যৌতুক নিরোধ আইন ২০১৮-এর ধারা ৩ ও ৪-এ বর্ণিত যৌতুক–সম্পর্কিত অভিযোগ’ এবং ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইন ২০০০-এর ধারা ১১(গ)-তে বর্ণিত যৌতুকের জন্য নির্যাতন–সম্পর্কিত অভিযোগ’কে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। এর অর্থ, প্রথমে ভুক্তভোগী নারীকে লিগ্যালএইড কার্যালয়ে মধ্যস্থতার মাধ্যমে নিষ্পত্তির জন্য আবেদন করতে হবে। মধ্যস্থতার প্রক্রিয়া ব্যর্থ হলে কোনো পক্ষ প্রয়োজনে আদালতে মামলা করতে পারবে।

 

অনেকের মনেই প্রশ্ন এসেছে, একজন নারীকে যৌতুকের জন্য নির্যাতন করার পর কীভাবে ‘মধ্যস্থতা’কে একটি ‘সমাধান’ ভেবে আইন করা হয়, যেখানে বাংলাদেশের সামাজিক পরিপ্রেক্ষিতে নারী এমনিতেই অপেক্ষাকৃত দুর্বল ও প্রান্তিক একটি পক্ষ।

 

তাই এ ধরনের আইনের ব্যবহার ভুক্তভোগীকে অনেক ক্ষেত্রেই অপরাধীর সঙ্গে আপস করতে বাধ্য করবে। এ ছাড়া দেশের ৬৪ জেলায় ৬৪ লিগ্যালএইড অফিসার কর্মরত আছেন। তাঁদের মাধ্যমে এ অতিরিক্ত দায়িত্ব পালনের কারণে অভিযোগুলোর দীর্ঘসূত্রতা বাড়বে, যা প্রকৃতপক্ষে নারীর মামলা করার আইনি অধিকারকেই বাধাগ্রস্ত করবে।

 

 

৪.

জেন্ডারভিত্তিক সহিংসতা ছাড়াও মব–সন্ত্রাস পরিস্থিতি পর্যালোচনায় হিউম্যান রাইটস সাপোর্ট সোসাইটির (এইচআরএসএস) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ২০২৪ সালের সেপ্টেম্বর থেকে গত মে পর্যন্ত ৯ মাসে মব–সন্ত্রাস ঘটেছে ২০২টি। এসব ঘটনায় ১৩১ জন নিহত ও ১৬৫ জন আহত হয়েছেন।

 

বেসরকারি প্রতিষ্ঠান মানবাধিকার সাংস্কৃতিক ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) পরিসংখ্যান অনুযায়ী, গত জুনে দেশে অন্তত ৪১টি গণপিটুনির ঘটনায় ১০ জন নিহত হন এবং গুরুতর আহত হন ৪৭ জন। ডাকাতি, চুরি, খুন, ধর্ষণ ও ধর্ষণচেষ্টা, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, কটূক্তি, প্রতারণা ও অপহরণের অভিযোগ এনে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে তাঁদের। (কালের কণ্ঠ, ৫ জুলাই ২০২৫)।

 

গণমাধ্যম ও বিশেষজ্ঞদের মতামতে, এমনকি আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিবৃতিতে এ ধরনের অপরাধকে ‘মব’ হিসেবেই আখ্যায়িত করা হলেও মূলধারার বাইরে গিয়ে সরকারের বিভিন্ন মহল থেকে এই মব–সন্ত্রাসকে পরোক্ষভাবে ন্যায্যতা দেওয়ার প্রবণতা দেখা গেছে। তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মবের সংজ্ঞাকে ‘স্ট্রেইচ’ (প্রসারিত) করে পূর্ববর্তী জনতার আদালত, জনতার মঞ্চ, শাহবাগ আন্দোলন—সবকিছুকেই মব ভায়োলেন্স বলে ব্যাখ্যা দিয়েছেন।

 

অথচ এই মব–সন্ত্রাস প্রকারান্তরে ‘জঙ্গল জাস্টিস’ বা ‘স্ট্রিট জাস্টিস’ হিসেবেও পরিচিত; যা মূলত নাগরিকের সামাজিক ও আইনি নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে একটি দেশের বিচারব্যবস্থার ব্যর্থতার প্রতি চরম অসন্তোষের বহিঃপ্রকাশকেই বোঝায়।

 


৫.

আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশের বর্তমান সংঘাতময় অবস্থান নিয়ে নানা আলোচনা হচ্ছে। জুন মাসে ইনস্টিটিউট ফর ইকোনমিকস অ্যান্ড পিস (আইইপি) প্রকাশিত বৈশ্বিক শান্তি সূচকে বাংলাদেশের অবস্থান ১২৩তম, যেখানে গত বছর অবস্থান ছিল ৯৩তম।

 

রিপোর্টটি সামাজিক নিরাপত্তা এবং সুরক্ষা, চলমান অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক সংঘাত এবং সামরিকীকরণ—এই তিন ক্ষেত্রে ২৩টি গুণগত এবং পরিমাণগত সূচক ব্যবহার করে সহিংসতার অনুপস্থিতি বা সহিংসতার আশঙ্কা পরিমাপ করে।

 

‘সামাজিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতা’ সূচকের আওতায় অভ্যন্তরীণ সংঘাত, রাজনৈতিক সন্ত্রাস এবং হিংসাত্মক বিক্ষোভ ও অপরাধের কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে বিপজ্জনক অবস্থানে আছে বলে মনে করে এই বৈশ্বিক শান্তিসূচক।

 

৬.

সাধারণভাবে অপরাধবিজ্ঞানে কিশোর ও তরুণদের মধ্যে অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধি বিষয়ে বিভিন্ন ধরনের মতবাদ পাওয়া যায়। ধ্রুপদি অপরাধবিজ্ঞানের স্রষ্টা সিজার বেকারিয়া ও জেরেমি বেনথাম মনে করেন, মানুষ তার যেকোনো কাজের প্রতিক্রিয়া বা ফলাফল মেপে তার আচরণ নির্ধারণ করে। তাদের ‘চয়েজ থিওরি’ বলে, কোনো অপরাধ সংঘটনে ‘লাভ’ এবং ‘লোকসান’–এর সতর্ক পরিমাপের পরই কেবল কেউ আইন ভঙ্গ করে বা অপরাধ করে।

 

অন্যদিকে প্রখ্যাত অপরাধবিজ্ঞানী এডউইন সাদারল্যান্ড এ বিষয়ে বলেন, তরুণ-কিশোরেরা পরিবার, বন্ধু, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমেই সামাজিক ও অসামাজিক ব্যবহার রপ্ত করে।

 

আমাদের সতর্ক থাকা প্রয়োজন, বাংলাদেশের কোনো তরুণ গোষ্ঠীর মধ্যে যেন এই বিশ্বাস না জন্মায় যে তারা যে অপরাধই করুক না কেন, কোনো এক জাদুবলে তারা ঠিকই আইনের ঊর্ধ্বে থাকবে।

 

সংশ্লিষ্ট গবেষণা আরও বলে, সংঘাত–উত্তর অপরাধপ্রবণতা বৃদ্ধির জন্য ভঙ্গুর আইন ও শাসনব্যবস্থা, বিচারহীনতা, অর্থনৈতিক বিপর্যয়, মানসিক আঘাত ও সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হওয়া/ দুর্বল সামাজিক বন্ধন ইত্যাদি কারণকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই নাজুক পরিস্থিতিতে অপরাধমূলক কার্যক্রমকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিভিন্ন দেশে নানা মেয়াদে গবেষণা ও কর্মপন্থার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।

 

যেমন লাইবেরিয়ার ওপর এক গবেষণায় দেখা যায় যে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ঝুঁকিপূর্ণ যুবকদের জন্য কাজের সুযোগ তৈরি করলে সংঘাত-পরবর্তী অপরাধপ্রবণতা উল্লেখযোগ্য হারে হ্রাস পায়। এ ছাড়া মানসিক পুনর্বাসন ও সামাজিক পুনর্মিলন, স্থানীয় ঐতিহ্যভিত্তিক বিচার, বহুমুখী নিরাপত্তা কৌশল ও আঞ্চলিক সহযোগিতার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশ সহিংস–পরবর্তী সময়ে অপরাধপ্রবণতাকে নিয়ন্ত্রণে আনার সুফল পেয়েছে।

 

একইভাবে বাংলাদেশের অন্তর্বর্তী সরকারের অন্যতম পদক্ষেপ হতে পারত, অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে অপরাধপ্রবণতার এই অনিবার্য ঊর্ধ্বগতির লাগাম টেনে ধরার কার্যকর পরিকল্পনা নিশ্চিত করা। সেটি করতে তারা মূলত ব্যর্থ হয়েছে।

 


৭.

বিভিন্ন অপরাধের এই মাত্রাতিরিক্ত বিস্তৃতি নিয়ে সরকারসহ নানা রাজনৈতিক দলের মধ্যে তেমন বিশেষ উদ্বেগ দেখা যায়নি, যতটা দেখা গেছে সংবিধান সংস্কার ও নির্বাচনবিষয়ক ঐক্য নিয়ে। অথচ জুলাই অভ্যুত্থান-পরবর্তী সময়ের ভাবনা নিয়ে ৮ জুলাই সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিং (সানেম) ও একশনএইডের একটি জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও মব (সংঘবদ্ধ বিশৃঙ্খলা) নিয়ে প্রায় ৭২ শতাংশ এবং অগ্নিসংযোগ, ছিনতাই ও চুরি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন ৮০ শতাংশ তরুণ উত্তরদাতা।

 

 

এ ছাড়া তরুণেরা কোন কোন ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সংস্কার চান, সেই প্রশ্নের উত্তরে সবচেয়ে বেশি জোর এসেছে শিক্ষা (৯৪ শতাংশ), স্বাস্থ্য (৯২ শতাংশ), শ্রমবাজার (৯০ শতাংশ), মানবাধিকার; অর্থাৎ নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতা (৮৯ শতাংশ), প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার (৮৫ শতাংশ) ইত্যাদি ক্ষেত্রে (প্রথম আলো, ৮ জুলাই ২০২৫)। দেখা যাচ্ছে, সরকার ও রাজনৈতিক দলের চিন্তার সঙ্গে তরুণ প্রজন্মের আশা–আকাঙ্ক্ষার মধ্যে অনেকখানিই পার্থক্য রয়ে যাচ্ছে।

 

৮.

এটা সত্য যে বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে নাগরিকের বর্তমান আর্থসামাজিক অনিরাপত্তা বা ভঙ্গুর বিচারব্যবস্থা পূর্ববর্তী বিভিন্ন সরকারের আমলের একটি ধারাবাহিক প্রক্রিয়ার অংশ। একটি অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের পক্ষে কয়েক মাসের মধ্যেতা আমূলে পাল্টে ফেলা সম্ভব নয়। তবে যা সম্ভব তা হলো, এসব অপরাধ দমনে সদিচ্ছা, দৃশ্যমান প্রচেষ্টা ও উপযুক্ত কর্মপরিকল্পনা করা; যা জনমনে অনেকখানি স্বস্তি ফিরিয়ে আনতে পারে।

 

একই সঙ্গে নির্বাচনের আগপর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকার যদি তরুণদের আশা–আকাঙ্ক্ষা ও সংস্কারের ভাবনাকে অগ্রাধিকার দিয়ে বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করে, তবে সময়ের পরিক্রমায় জনবিচ্ছিন্ন হওয়ার পরিবর্তে জনমুখী একটি রাষ্ট্রব্যবস্থার আশাবাদ হয়তো আমরা করতে পারব।

 

উম্মে ওয়ারা সহযোগী অধ্যাপক, ক্রিমিনোলজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

মতামত লেখকের নিজস্ব