নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার কতটা জরুরি
বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার অত্যন্ত জরুরি এবং এটি দেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক আস্থা ও রাজনৈতিক বৈধতার জন্য মৌলিক একটি বিষয়। প্রফেসর এম এ রশীদ [প্রকাশ : নয়াদিগন্ত, ২৩ জুলাই ২০২৫]

বাংলাদেশের নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার অত্যন্ত জরুরি এবং এটি দেশের গণতান্ত্রিক স্থিতিশীলতা, সামাজিক আস্থা ও রাজনৈতিক বৈধতার জন্য মৌলিক একটি বিষয়। এর প্রয়োজনীয় কয়েকটি মূল দিক নিয়ে আলোকপাত করা হলো :
১. গণতান্ত্রিক বৈধতা প্রতিষ্ঠা
গণতন্ত্রের মূল ভিত্তি হলো জনগণের মতপ্রকাশের অধিকার, যা নিশ্চিত হয় একটি অংশগ্রহণমূলক, অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে; কিন্তু বাংলাদেশে বারবার দেখা গেছে, জাতীয় নির্বাচনগুলোতে বিরোধী দলের অংশগ্রহণ ব্যাহত হয়েছে, অনেকসময় তারা নির্বাচন বর্জন করেছে কিংবা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। একতরফা নির্বাচন, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে নিরুৎসাহিত করা এবং ভোটার উপস্থিতির আশঙ্কাজনক ঘাটতি এসব প্রবণতা নির্বাচনব্যবস্থার ওপর জনগণের আস্থা নষ্ট করে।
এই পরিস্থিতিতে নির্বাচিত সরকারের গণতান্ত্রিক বৈধতা প্রশ্নবিদ্ধ হয়, যা শুধু অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সঙ্কটই নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলেও দেশের ভাবমর্যাদাকে ক্ষুণœ করে। অতএব, একটি বৈধ ও গ্রহণযোগ্য শাসনব্যবস্থা গড়ে তুলতে হলে নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার এবং সব পক্ষের আস্থার ভিত্তিতে একটি নির্বাচনী পরিবেশ তৈরি করা সময়ের দাবি।
২. রাজনৈতিক সহিংসতা ও উত্তেজনা হ্রাস
বাংলাদেশের নির্বাচনী ইতিহাসে প্রায় প্রতিটি জাতীয় নির্বাচনের আগে ও পরে রাজনৈতিক সহিংসতা, হরতাল, অবরোধ, সংঘর্ষ ও প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে অবিশ্বাস, প্রতিদ্ব›িদ্বতার চেয়ে প্রতিহিংসা এবং প্রশাসনের নিরপেক্ষতা নিয়ে সন্দেহ- এসবই এই সহিংসতার মূল কারণ। নির্বাচনী পদ্ধতির ওপর জনগণ ও রাজনৈতিক দলের আস্থা না থাকলে নির্বাচন হয়ে ওঠে একধরনের যুদ্ধক্ষেত্র, যেখানে প্রতিযোগিতা নয়; বরং শত্রুতা প্রবল হয়ে ওঠে।
একটি গ্রহণযোগ্য ও স্বচ্ছ নির্বাচনপ্রক্রিয়া থাকলে রাজনৈতিক দলগুলো সমঝোতার মাধ্যমে সমস্যার সমাধান খুঁজতে আগ্রহী হয়। নির্বাচনী লড়াইকে তারা তখন শত্রুতার বদলে গণতান্ত্রিক প্রতিযোগিতা হিসেবে বিবেচনা করে। ফলাফল মেনে নেয়ার মানসিকতা গড়ে ওঠে, যা দীর্ঘমেয়াদে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও সহিংসতা হ্রাসে সহায়ক হয়।
৩. প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা ও নির্বাচন কমিশনের স্বাধীনতা
একটি অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের পূর্বশর্ত হলো প্রশাসনিক নিরপেক্ষতা এবং একটি শক্তিশালী, স্বাধীন ও কার্যকর নির্বাচন কমিশন; কিন্তু বাংলাদেশে দীর্ঘ দিন ধরে নির্বাচন কমিশনের ওপর রাজনৈতিক প্রভাব, পক্ষপাতমূলক আচরণ এবং ক্ষমতাসীন দলের প্রতি নমনীয় অবস্থানের অভিযোগ উঠে এসেছে। ফলস্বরূপ, কমিশনের কার্যক্রম নিয়ে জনগণের মধ্যে আস্থার সঙ্কট তৈরি হয়েছে।
যদি নির্বাচন কমিশন সত্যিকার অর্থে স্বাধীন, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিতার আওতায় না থাকে, তাহলে কোনো নির্বাচনী ফলাফলই সর্বজনগ্রাহ্য হবে না। নির্বাচনী প্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে প্রার্থিতা যাচাই, ভোট গ্রহণ, ফলাফল ঘোষণা, কমিশনের নিরপেক্ষতা দৃশ্যমান না হলে বিরোধী দল, ভোটার ও আন্তর্জাতিক মহলে সেই নির্বাচন গ্রহণযোগ্যতা হারায়।
তাই নির্বাচন কমিশনকে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকেই পূর্ণ স্বাধীনতা দিতে হবে, তার গঠনের পদ্ধতি পুনর্বিবেচনা করতে হবে এবং কমিশনের সদস্যদের নিয়োগে রাজনৈতিক ভারসাম্য ও পেশাগত যোগ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
৪. ভোটাধিকার নিশ্চিতকরণ
ভোটাধিকার হলো একটি নাগরিকের অন্যতম মৌলিক গণতান্ত্রিক অধিকার; কিন্তু বাংলাদেশে এই অধিকার বিপন্ন হয়েছে। নির্বাচন ঘিরে জাল ভোট, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোটকেন্দ্র দখল এবং ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগ বহুদিন ধরেই প্রচলিত। এসব অনিয়ম ভোটারদের মধ্যে ভীতি ও হতাশা তৈরি করে, যার ফলে ভোটার উপস্থিতি কমে যায় এবং নির্বাচনের প্রতি জনগণের আগ্রহ হ্রাস পায়।
সাম্প্রতিক সময়ে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন-ইভিএম, সিসিটিভি ক্যামেরা এবং ডিজিটাল নজরদারির মতো প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। কিন্তু যদি এই প্রযুক্তির ব্যবহারে স্বচ্ছতা ও নিরপেক্ষতা না থাকে, অথবা সেগুলোর নিয়ন্ত্রণ রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত না হয়, তাহলে প্রযুক্তি শুধু ‘আবরণ’ হিসেবে কাজ করবে- প্রকৃত স্বচ্ছতা আসবে না।
তাই ভোটাধিকার নিশ্চিত করতে হলে শুধু প্রযুক্তির ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নির্বাচন পরিচালনার প্রতিটি ধাপে (নিয়োগ, প্রশিক্ষণ, পরিবহন, গণনা) রাজনৈতিক হস্তক্ষেপমুক্ত ও জবাবদিহিমূলক একটি কাঠামো নিশ্চিত করা জরুরি। ভোটার যেন নিশ্চিত থাকে তার ভোটটি সত্যিই গণনায় গৃহীত হয়েছে, এটিই হচ্ছে গণতান্ত্রিক আস্থার ভিত্তি।
৫. আন্তর্জাতিক গ্রহণযোগ্যতা ও কূটনৈতিক সম্পর্ক
বর্তমানে একটি দেশের নির্বাচন কেবল অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক প্রক্রিয়া নয়; এটি আন্তর্জাতিক পর্যায়েও মূল্যায়িত হয়। বাংলাদেশে বিগত কয়েকটি নির্বাচনে অংশগ্রহণের স্বচ্ছতা ও গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে আন্তর্জাতিক মহলে বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাতিসঙ্ঘ এবং আঞ্চলিক পর্যবেক্ষক গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে উদ্বেগ ও সমালোচনা বেড়েছে। নির্বাচনের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রকাশ্যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে, নিষেধাজ্ঞার হুমকি বা কূটনৈতিক চাপও এসেছে।
অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন না হলে শুধু দেশের গণতান্ত্রিক ইমেজ ক্ষতিগ্রস্ত হয় না; বরং বিদেশী বিনিয়োগ, উন্নয়ন সহযোগিতা এবং বাণিজ্যিক সুবিধা সরাসরি হুমকির মুখে পড়ে। গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসনকে যারা তাদের বৈদেশিক নীতির কেন্দ্রে রাখে তারা তখন দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক পুনর্মূল্যায়ন করে। এতে জিএসপি সুবিধা, ঋণ সহায়তা, কিংবা কৌশলগত অংশীদারিত্ব ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
তাই কেবল অভ্যন্তরীণ শান্তি নয়, আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলাদেশের মর্যাদা ও স্থিতিশীল সম্পর্ক বজায় রাখার জন্যও একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচন ব্যবস্থা অপরিহার্য।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক বাস্তবতায় একটি উদ্বেগজনক প্রবণতা দীর্ঘ দিন ধরে লক্ষ করা যাচ্ছে- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অনুপস্থিতিতে ক্ষমতা অর্জনের জন্য শুধু অভ্যন্তরীণ নয়; বরং আন্তর্জাতিক শক্তির সহায়তা নেয়ার প্রবণতা বেড়েছে। এমন অভিযোগও আছে, আন্তর্জাতিক মহল বিশেষ করে প্রতিবেশী ভারত নির্বাচনের ফলাফল প্রভাবিত করতে বা নির্দিষ্ট পক্ষকে ক্ষমতায় আনতে পরোক্ষভাবে ভূমিকা রেখেছে।
২০১৪ সালের নির্বাচনকে ঘিরে বিরোধী দলের বর্জন, সহিংসতা ও সর্বস্তরের ভোটার বিমুখতার প্রেক্ষাপটে ভারতের তাৎক্ষণিক স্বীকৃতি এবং পরে একই ধরনের অবস্থান ২০১৮ সালেও দেখা গেছে। এতে অনেক পর্যবেক্ষকের মতে, ভারত তার কৌশলগত স্বার্থ রক্ষায় নির্ভরযোগ্য শাসকের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, যদিও তা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ গণতান্ত্রিক চর্চার পরিপন্থী।
এ ধরনের হস্তক্ষেপ বা রাজনৈতিক পক্ষপাতিত্ব থেকে উদ্ভূত সমস্যাগুলো হলো : জাতীয় সার্বভৌমত্ব ক্ষুণœ হওয়া, জনগণের আস্থা আরো দুর্বল হওয়া, বৈদেশিক সম্পর্ক রাজনৈতিকভাবে বিভাজিত হয়ে পড়া, রাজনীতিতে পরাশক্তি-নির্ভরতা তৈরি হওয়া। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় জনগণই হচ্ছে সর্বোচ্চ ক্ষমতার উৎস- এই মৌলিক চেতনা নষ্ট হয়ে যায় যখন নির্বাচন বিদেশী সমর্থন-নির্ভর ‘ম্যানেজড প্রক্রিয়া’ হয়ে পড়ে।
সমাধানের দিক
বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়াকে পূর্ণরূপে স্বচ্ছ ও সার্বভৌমভিত্তিক করতে হবে। সব আন্তর্জাতিক সহযোগিতা হওয়া উচিত পর্যবেক্ষণমূলক ও সহায়কভাবে, কোনোভাবেই প্রভাবশালী নয়। জনগণের ভোটের মাধ্যমেই ক্ষমতার বৈধতা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে জাতীয় ঐকমত্য গড়ে তুলতে হবে।
৬. দীর্ঘমেয়াদি রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
একটি টেকসই ও শক্তিশালী গণতন্ত্র গড়ে তোলার জন্য নিয়মতান্ত্রিক, শান্তিপূর্ণ ও গ্রহণযোগ্য ক্ষমতা হস্তান্তর অত্যন্ত জরুরি; কিন্তু বাংলাদেশে প্রায় প্রতিটি নির্বাচনকে কেন্দ্র করে রাজনৈতিক উত্তেজনা, সহিংসতা, নির্বাচন বর্জন এবং অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। ফলস্বরূপ, সরকার ও বিরোধী দলের মধ্যে আস্থার সঙ্কট তীব্র হয় এবং রাজনৈতিক ব্যবস্থায় স্থায়ী অস্থিরতা বিরাজ করে।
এই সঙ্কট কেবল বারবার নির্বাচনকেন্দ্রিক অস্থিরতার পুনরাবৃত্তিই ঘটায় না; বরং প্রশাসনিক কার্যকারিতা, নীতিনির্ধারণে ধারাবাহিকতা এবং জনগণের আস্থার ভিত্তিকেও দুর্বল করে তোলে। এতে করে দেশের উন্নয়নপ্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হয় এবং আন্তর্জাতিক পর্যায়ে রাষ্ট্রের রাজনৈতিক অবস্থানও দুর্বল হয়ে পড়ে।
তাই নির্বাচনব্যবস্থা সংস্কার না করে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্রের ভবিষ্যৎ নিশ্চিত করা সম্ভব নয়। একটি বিশ্বাসযোগ্য ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনব্যবস্থা থাকলে ক্ষমতা হস্তান্তর হয় নিয়মমাফিক, রাজনৈতিক দলগুলো পালাক্রমে ক্ষমতায় যেতে পারে এবং জনগণের ভোটের অধিকার কার্যকর হয়, এই প্রক্রিয়াতেই জন্ম নেয় একটি স্থিতিশীল ও বিকাশমান রাষ্ট্র।
৭. জনগণের আস্থা ও অংশগ্রহণ বাড়ানো
গণতন্ত্র কেবল একটি নির্বাচন আয়োজনের মাধ্যমে টিকে থাকে না, এটি টিকে থাকে জনগণের আস্থা ও সক্রিয় অংশগ্রহণের ওপর ভিত্তি করে। যদি জনগণ মনে করে যে, তাদের ভোট শুধুই প্রতীকী এবং তা বাস্তবে কোনো প্রভাব ফেলে না- তাহলে গণতন্ত্র নিস্তেজ, প্রাণহীন ও বিশ্বাসহীন হয়ে পড়ে।
বাংলাদেশের নির্বাচনী প্রক্রিয়া নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই সাধারণ মানুষের মধ্যে অবিশ্বাস, অনীহা ও সন্দেহের পরিবেশ তৈরি হয়েছে। অনেকেই ভোট দিতে যান না, অনেকে মনে করেন- ফলাফল পূর্বনির্ধারিত। এই আস্থার সঙ্কট গণতন্ত্রকে দুর্বল করে এবং জনগণ ধীরে ধীরে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থার প্রতি উদাসীন হয়ে পড়ে।
এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নির্বাচনপ্রক্রিয়ার প্রতিটি ধাপে প্রার্থিতা যাচাই, সমান সুযোগে প্রচারণা, ভোট গ্রহণের নিরাপত্তা, ব্যালট গণনার স্বচ্ছতা এবং ফলাফল ঘোষণার নিরপেক্ষতা নিশ্চিত করতে হবে। একটি ভোটার তখনই ভোট দিতে আগ্রহী হন, যখন তিনি নিশ্চিত হন তার ভোট গণনায় যাবে এবং ফলাফলে প্রতিফলিত হবে। এ আস্থা ফিরিয়ে আনাই এখন সময়ের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।
৮. ভোটের রাজনীতিতে অবৈধ অর্থ ব্যয় : গণতন্ত্রের বিপর্যয়
বর্তমান সময়ের নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় একটি চরম পর্যায়ে পৌঁছেছে। প্রার্থী নির্বাচনে মনোনয়ন পাওয়া থেকে শুরু করে প্রচারণা, ভোটার প্রভাবিতকরণ এবং কখনো কখনো ভোট কেনা পর্যন্ত সব ক্ষেত্রেই বিপুল পরিমাণ টাকা খরচ করা হয়। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো- এই অর্থের বড় একটি অংশ আসে অবৈধ, অঘোষিত বা কালো উৎস থেকে, যেমন- চাঁদাবাজি, দুর্নীতি, লুটপাট বা অবৈধ ব্যবসায়। এ ধরনের অর্থব্যবস্থা কয়েকটি মারাত্মক সমস্যার জন্ম দেয়। রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন ঘটে। সৎ ও সাধারণ প্রার্থীরা অর্থ না থাকায় নির্বাচনে অংশ নিতে পারেন না, ফলে অর্থসম্পদই প্রার্থী নির্বাচনের প্রধান মানদণ্ড হয়ে দাঁড়ায়।
দুর্নীতির চক্র : নির্বাচনে কোটি কোটি টাকা খরচ করা ব্যক্তি বা গোষ্ঠী ক্ষমতায় এসে প্রথমেই সেই অর্থ ‘উদ্ধার’ করার চেষ্টা করে। ফলে প্রশাসনে দুর্নীতি, নিয়োগবাণিজ্য, টেন্ডার সিন্ডিকেট আরো গভীর হয়।
ভোটার প্রভাবিতকরণ : ভোটারদের প্রলোভন দেখিয়ে গণতন্ত্রকে পণ্য বানিয়ে ফেলা হয়। আদর্শ ও নীতির জায়গা দখল করে পয়সা ও প্রভাব।
সংসদ বা জনপ্রতিনিধিত্বের অবমূল্যায়ন : নির্বাচিত হওয়ার লক্ষ্য হয়ে ওঠে ব্যবসায়িক বিনিয়োগের মতো; সেবা নয়, লাভের হিসাব।
এই পরিস্থিতির উত্তরণে জরুরি কিছু পদক্ষেপ : রাজনৈতিক দলের অর্থায়নে স্বচ্ছতা ও নিরীক্ষা বাধ্যতামূলক করা, নির্বাচনী ব্যয়ের উচ্চসীমা কার্যকরভাবে নির্ধারণ ও পর্যবেক্ষণ করা, অবৈধ অর্থ বা কালো টাকার উৎসে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা এবং জনগণকে অর্থনির্ভর রাজনীতির বিরুদ্ধে সচেতন করা।
বাংলাদেশে নির্বাচন সংস্কার কেবল প্রয়োজনীয় নয়; বরং রাষ্ট্রের ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য অপরিহার্য। একটি নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনব্যবস্থা গড়ে তুলতে রাজনৈতিক দল, নাগরিক সমাজ, মিডিয়া ও আন্তর্জাতিক মহলের সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন।
লেখক : সিনিয়র ফেলো, এসআইপিজি, নর্থ-সাউথ ইউনিভার্সিটি