এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি অর্থনৈতিক সংস্কার
সূত্র : কালের কণ্ঠ, ২৭ জানুয়ারি ২০২৫

রাজস্ব আদায় ও ব্যবস্থাপনায় দেশ সঠিক পথে এগিয়ে যাচ্ছে। তবে প্রযুক্তিগত ও প্রক্রিয়াগত দিক থেকে অনেক পিছিয়ে আছি। সময়ের সঙ্গে তাল মেলাতে আমাদের আধুনিক যুগে প্রবেশ করতে হবে। গতকাল রবিবার আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উপলক্ষে আগারগাঁওয়ে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) সম্মেলনকক্ষে আয়োজিত আলোচনাসভায় এ কথা বলেন অর্থ উপদেষ্টা ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ।
এবারের কাস্টমস দিবসের মূল প্রতিপাদ্য ‘কাস্টমস সেবায় প্রতিশ্রুতি দক্ষতা নিরাপত্তা প্রগতি’। সবচেয়ে জরুরি অর্থনৈতিক সংস্কার: সংস্কার নিয়ে অনেক কথা হয়েছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি অর্থনৈতিক সংস্কার। সংস্কার কঠিন আবার সহজ। মৌলিক কিছু আইনকানুনের জন্য সংস্কার কঠিন।
আবার প্রক্রিয়াগত আইনকানুন সুষ্ঠু, সঠিক ও স্বচ্ছভাবে ব্যবহার করতে পারলে সহজ। সিস্টেমের সঠিক ব্যবহার করতে হবে। নির্বিচারে ব্যয় করা যাবে না : রাজস্ব আদায় চ্যালেঞ্জের উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘রাজস্ব আদায়ের পর তা নির্বিচারে ব্যয় করা মোটেই ঠিক হবে না। আমাদের রাজস্ব আয় ও ব্যয় উভয়ই যৌক্তিক করতে হবে।
এটা সবার আকাঙ্ক্ষ।’ এ সময় কর্মকর্তাদের উদ্দেশে তিনি বলেন, জোর করে টাকা-পয়সা আদায় করবেন না। অনুষ্ঠানে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন এনবিআরের কাস্টমস নীতি ও আইসিটি অনুবিভাগের সদস্য হোসেন আহমদ। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে অংশীজনদের উপস্থিতি ছাড়াই স্বয়ংক্রিয়ভাবে কাস্টমস সেবা দিতে পারবে। ডেটা অ্যানালিটিকস, আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স এবং মেশিন লার্নিংয়ের মতো প্রযুক্তির ব্যবহার ঝুঁকি ব্যবস্থাপনা ও অন্যান্য সিদ্ধান্ত গ্রহণকে সহজ করবে।
ভ্যাট ও ট্যাক্স বাড়ানোর আগে বা এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে ব্যবসায়ীদের মতামত নেওয়া উচিত বলে মনে করেন অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি ও এফবিসিসিআইয়ের প্রশাসক মো. হাফিজুর রহমান। এ ছাড়া বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন অর্থসচিব ড. মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার।
কাস্টমসের গুরুত্ব কমেনি: অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে এনবিআরের চেয়ারম্যান মো. আবদুর রহমান খান বলেন, ‘একটা সময় ছিল, যখন বাংলাদেশের রাজস্বের প্রধান উৎস ছিল কাস্টমস। তখন আয়কর দেওয়ার মতো জনশক্তি ছিল না। ভ্যাট ছিল না। তখন কেবল কাস্টমস থেকে রাজস্ব পেতাম। আমরা এখন কাস্টমসকে ব্যবহার করছি ট্রেড ফ্যাসিলিটেশনের যন্ত্র হিসেবে। রাজস্ব আদায় কমলেও আমাদের কাস্টমসের গুরুত্ব কমেনি। কাস্টমসের মূল উদ্দেশ্য দেশীয় শিল্পকে রক্ষা করা। দেশের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে কাস্টমস শুল্ক ও বিধি-নিষেধ দেওয়া।’
সার্টিফিকেট অব মেরিট পেলেন ১৬ কর্মকর্তা: কর্মক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রাখায় ১৬ জন কর্মকর্তাকে দেওয়া হয়েছে সার্টিফিকেট অব মেরিট সম্মাননা। পুরস্কার পাওয়া কর্মকর্তারা হলেন ঢাকা দক্ষিণ বন্ডের কমিশনার মো. লুৎফর রহমান, সিলেট কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার খন্দকার নাজমুল হক, খুলনা কমিশনারেটের অতিরিক্ত কমিশনার মো. বশীর আহমেদ, আইসিডির অতিরিক্ত কমিশনার মো. সফিউর রহমান ও ডেপুটি কমিশনার ওমর মবিন, ঢাকা দক্ষিণ কমিশনারেটের যুগ্ম কমিশনার হাসনাইন মাহমুদ ও ডেপুটি কমিশনার মিজ খাদিজা পারভীন সুমী, চট্টগ্রাম কাস্টমসের যুগ্ম কমিশনার মো. মারুফুর রহমান, ঢাকা কাস্টমসের ডেপুটি কমিশনার মিজ সানজিদা শারমিন, এনবিআরের দ্বিতীয় সচিব মো. আহসান উল্লাহ, শুল্ক গোয়েন্দার উপপরিচালক পারভেজ আল জামান, রাজস্ব কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান মুন্সী, সারোয়ার আলম, মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন এবং সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা মো. শাহাদাত হোসেন ও মো. আতিকুল ইসলাম।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশসহ ওয়ার্ল্ড কাস্টমস অর্গানাইজেশনের (ডব্লিউসিও) সদস্যভুক্ত ১৮৬টি দেশে একযোগে আন্তর্জাতিক কাস্টমস দিবস উদযাপন করা হয়। ২০০৯ সাল থেকে ডব্লিউসিও ২৬ জানুয়ারিকে কাস্টমস দিবস হিসেবে ঘোষণা করার পর থেকে দিবসটি উদযাপন করা হচ্ছে।