কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

বীরত্ব প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে মোদির কৌশলগত পরাজয়

যুদ্ধের বৃহত্তর কৌশল ও রণকৌশল সব ক্ষেত্রে জঙ্গিবিমান ও ড্রোনের ব্যবহারকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে নতুন ‘প্রিন্সিপলস অব ওয়ার’ বা ‘যুদ্ধজয়ের নীতিমালা’-এর তালিকা সাজাতে হতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় যে প্রভাব পড়বে সেটি হলো নরেদ্র মোদি ও তার দল বিজেপির জনপ্রিয়তায় ধস নামতে পারে। এমনকি বিজেপির টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসা কঠিন হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে কংগ্রেস ও অন্যান্য দল এ যুদ্ধে ভারতের লেজেগোবরে অবস্থার জন্য মোদিকে দায়ী করছে ড. এ কে এম মাকসুদুল হক [প্রকাশ : নয়াদিগন্ত, ১২ জুলাই ২০২৫]

বীরত্ব প্রতিষ্ঠার যুদ্ধে মোদির কৌশলগত পরাজয়

পহেলগাম পর্যটক হত্যার মধ্য দিয়ে ভারত ও পাকিস্তান ১৮ দিনব্যাপী সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। ১৪ দিনের বিক্ষিপ্ত সীমান্ত সংঘর্ষ শেষে চার দিনের ‘উচ্চ তীব্রতর সংঘর্ষ’ বা ‘হাই ইনটেনসিটি কনফ্লিক্ট’ সংঘটিত হয়। সামরিক ইতিহাসের সবচেয়ে বড় বিমান ‘ডগ ফাইট’ হয় তাদের মধ্যে। শত শত ড্রোন ওড়ায় উভয়পক্ষ। দু’পক্ষের প্রায় তিন শ’ বিমান ‘মোরগ লড়াইয়ে’ অবতীর্ণ হয়। তবে পাকিস্তানের ভয়াবহ পাল্টা আক্রমণের পর যুক্তরাষ্ট্র চাপ দিয়ে যুদ্ধ থামিয়ে দেয়। এখন উভয় দেশ জয়ী হওয়ার দাবি করছে।

 

পটভূমি : যে কাশ্মির নিয়ে ভারত-পাকিস্তান আগে আরো চারটি যুদ্ধ করেছে সেখান থেকে এই পঞ্চম যুদ্ধের শুরু হয়েছিল। ১৯৪৭, ১৯৬৫, ১৯৯৯ ও ২০১৯ সালের যুদ্ধগুলোতে জয়-পরাজয় অনিষ্পন্ন থাকলেও ২০২৫ সালের এ যুদ্ধে পাকিস্তান কৌশলগতভাবে জয় পেয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। তবে ভারতের যুদ্ধ ‘ট্রিগার’ করার বিষয়টি একেবারে ধোঁয়াশে রয়ে গেছে। ২২ এপ্রিল ভারতস্থ কাশ্মিরে সন্ত্রাসী হামলায় একজন স্থানীয়সহ ২৬ পর্যটক (১৫ জন মুসলমান ও ১১ জন হিন্দু) নিহত হন। ভারত কোনো তদন্ত বা প্রমাণ ছাড়া পাকিস্তানকে দায়ী করে প্রতিশোধ নেয়ার হুমকি দেয়। সেই সাথে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে কূটনৈতিক, বাণিজ্যিক, অর্থনৈতিক পদক্ষেপ নেয়। একই সাথে সিন্ধু নদীর পানির দ্বিপক্ষীয় চুক্তি বাতিলের ঘোষণা দেয়। পাকিস্তান নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানায় এবং পাল্টা ভারতবিরোধী বিভিন্ন প্রতিক্রিয়ামূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করে। অন্য দিকে চলতে থাকে দেশ দু’টির মধ্যে বিক্ষিপ্ত সীমান্ত সংঘর্ষ।

 

 

চার দিনের যুদ্ধ : এরই মধ্যে ভারত ৬ মে রাতের গভীরে পাকিস্তানের অভ্যন্তরে অতর্কিতে ৯টি স্থানে ২৪টি আক্রমণ চালায়। ভারত বেসামারিক লক্ষ্যবস্তুতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়ে পাকিস্তানের জঙ্গি আস্তানাগুলো গুঁড়িয়ে দিয়েছে বলে ঘোষণা দেয়। এ হামলায় শিশুসহ পাকিস্তানের ৩১ বেসামরিক নাগরিক নিহত হন। মসজিদসহ কিছু বাড়িঘর ধ্বংস হয়। ভারত এটিকে অসাধারণ সফলতা হিসেবে দেখায় এবং ভারতীয় মিডিয়া মোদির বীরত্বগাথার ব্যাপক প্রচারণায় নেমে পড়ে।

 

 

পাকিস্তান এ হামলার জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত ছিল। ইসলামাবাদ ‘প্রকৃত সময়’ গোয়েন্দা তথ্যে সমৃদ্ধ ছিল। ফলে ভারতের আক্রমণের পাঁচ মিনিটের মধ্যে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা সক্রিয় হয়। ‘ডিফেন্সিভ’ যুদ্ধ শুরু করে। চীনের জে-১০ যুদ্ধবিমান ব্যবহার করে ভারতের তিনটি ‘রাফায়েল’ ফাইটার বিমানসহ মোট পাঁচটি ভারতের মাটিতে ধ্বংস করে দেয়। সেই সাথে ‘নিয়ন্ত্রণরেখা’ বরাবর ভারতের একটি বিগ্রেড সদর এবং একটি ব্যাটালিয়ান সদর দফতর ধ্বংস করতে সমর্থ হয়।

 

 

এ সময় পাকিস্তানের বিমানগুলো ভারতের আকাশসীমাতে ভারতীয় ড্রোন ও বিমানগুলোর সাথে ইতিহাসের সবচেয়ে বড় ‘ডগ ফাইটে’ লিপ্ত হয়। সেই সাথে পাকিস্তান ‘সাইবার’ ওয়ারে ঝাঁপিয়ে পড়ে ভারতের ইলেকট্র্রনিক ব্যবস্থায় জ্যামিং দিয়ে বিমানগুলোকে অন্ধ করে দেয়। ফলে ভারতীয় বিমান বাহিনী অপ্রস্তুত হয়ে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে কাবু হয়ে পড়ে। ‘বিবিসি’, ‘সিএনএন’ ইত্যাদি সংবাদমাধ্যম ‘রাফায়েল’ ধ্বংসের সংবাদ প্রকাশ করলেও ভারতীয় মিডিয়া শুধু ভারতীয় বীরত্বগাথা ফলাও করে প্রচার করতে থাকে। ভারত এ অভিযানের নাম দিয়েছিল ‘অপারেশন সিঁদুর’। ‘সিঁদুর’ শব্দটি হিন্দু সংস্কৃতি থেকে নিয়ে ভূরাজনৈতিক যুদ্ধটির ধর্মীয় আবরণ দিয়ে অভ্যন্তরীণ জনতুষ্টির কৌশল নেয়া হয় বলে অনেকের ধারণা। কিন্তু পাকিস্তান ধীরস্থিরভাবে ধৈর্যের সাথে নীরবে ব্যাপক প্রতি-আক্রমণের প্রস্তুতি নিতে থাকে। তিনটি দিন বিশ্ববাসী রুদ্ধশ্বাসে আপেক্ষা করতে থাকে পারমাণবিক প্রতিক্রিয়ার আশঙ্কায়। শেষে ১০ এপ্রিল সকালে পাকিস্তান ফাতাহ-১, ফাতাহ-২ ও বাবর ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র এবং জেএফ-১৭ বিমান দিয়ে ভারতের অভ্যন্তরে ভয়াবহ হামলা চালায়। এতে ভারতের ‘ব্রক্ষস’ নামক ক্ষেপণাস্ত্র মজুদখানা এবং আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ‘এস-৪০০’ ধ্বংস করে দেয়। সেই সাথে সাইবার হামলা করে ভারতের ‘বিদ্যুৎ গ্রিড, বিজেপির ওয়েবসাইটসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সাইবার হাব অকার্যকর করে। কিন্তু ভারতীয় মিডিয়া যথারীতি এ পাল্টা হামলায় সামান্য ক্ষয়ক্ষতির ফিরিস্তি দিতে থাকে।

 

 

 

মার্কিন যুদ্ধবিরতি আরোপ : মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ৯ মে বলেছিলেন, পাক-ভারত যুদ্ধ যুক্তরাষ্ট্রের কোনো বিষয় নয়। কিন্তু তিনি এ অবস্থান থেকে ‘ইউটার্ন’ নিয়ে ১০ মে দুপুরে পাক-ভারত যুদ্ধবিরতি ঘোষণা দেন। আলজাজিরার বিশ্লেষণে বলা হয়, যুদ্ধে ভারতের ভয়াবহ বিপর্যয়ের গোয়েন্দা তথ্য মার্কিনিদের কাছে পৌঁছে যায়; যা দক্ষিণ এশিয়ার গতি-প্রকৃতিই বদলে দিতে পারত। ফলে তারা ভারতকে বাধ্য করে যুদ্ধবিরতিতে রাজি হতে এবং ট্রাম্প নিজে তার ঘোষণা দেন। কারণ ভারত দুর্বল হয়ে পড়লে চীনের বৈশ্বিক উত্থান ঠেকানোর মার্কিন কৌশলও দুর্বল হয়ে যাবে। ফলে ১০ মে বিকেল ৫টা থেকে যুদ্ধবিরতি কার্যকর হয়। পাকিস্তান ট্রাম্পকে এ উদ্যোগ নেয়ার জন্য অভিনন্দন জানায়। কিন্তু রহস্যজনকভাবে ভারত নিশ্চুপ থেকে শুধু যুদ্ধবিরতি পালন করে। তবে বিভিন্ন সূত্রে প্রকাশ, পাকিস্তানের প্রতি-আক্রমণমূলক অভিযান অপারেশন ‘বুনইয়ানুম মারসুস’-এর তীব্রতায় ভারত ভড়কে যায় এবং গোপনে যুক্তরাষ্ট্রের দ্বারস্থ হয় ‘যুদ্ধবিরতির’ ব্যবস্থা নেয়ার জন্য।

 

 

ভারতের পিছু হটার কারণ : ভারত প্রথম যুদ্ধ শুরু করছিল। পাকিস্তান ছিল রক্ষণাত্মক অবস্থানে। কিন্তু এ যুদ্ধে ভারতের পাকিস্তান আক্রমণের যুক্তি মোটে গ্রহণযোগ্য ছিল না। কোনো তদন্ত ছাড়া পাকিস্তানকে ‘পহেলগাম’ হত্যাকাণ্ডে জড়িত করা ছিল আন্তর্জাতিক নিয়মনীতির পরিপন্থী। ‘ফলে ভারত নিজেরা হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে পাকিস্তান আক্রমণের ‘নেরেটিভ’ তৈরি করার পাকিস্তানি বক্তব্য- অনেকটা গ্রহণযোগ্য হয়েছে। শুরু থেকে এটি মোদির অভ্যন্তরীণ রাজনীতির হিন্দুত্ববাদী জনতুষ্টিমূলক পাঁয়তারা বলে মনে হয়েছে। ফলে পাকিস্তানি জাতি জিহাদি জজবায় ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল এবং জানবাজি রাখার শপথ নিয়েছিল।

 

 

ভারতের যুদ্ধের যৌক্তিকতার আড়ালে ছিল আঞ্চলিক আধিপত্য সমুন্নত করা, চলমান অভ্যন্তরীণ মুসলিম নির্যাতন থেকে বিশ্ববাসীর নজর সরানো, বিহারে অনুষ্ঠিতব্য নির্বাচনের প্রাক্কালে মোদির বীরত্বগাথা প্রতিষ্ঠিত করা এবং কাশ্মিরে আরো একটি ‘ক্র্যাকডাউনের’ পটভূমি তৈরি করা ইত্যাদি। তা ছাড়া ফরাসি ‘রাফায়েল’ যুদ্ধবিমানের ওপর অতিরিক্ত আস্থা, ভারতীয় বিমানবাহিনী ও সাইবার যোদ্ধাদের দুর্বলতা ছিল স্পষ্ট। বিভিন্ন সূত্রমাফিক প্রকাশিত, ভারতীয় সশস্ত্রবাহিনীকে মোদি সরকার যুদ্ধ চাপিয়ে দেয়ায় সামরিক নেতৃত্বে সৃষ্ট মতানৈক্য ছিল একটি বড় দুর্বলতা। ভারতীয় মিডিয়ার অতিরঞ্জিত সংবাদ পরিবেশনা ছিল একটি আত্মঘাতী পদক্ষেপ। সার্বক্ষণিক মিথ্যা সংবাদ সম্প্রচার করে ভারতীয়দের ভুল আত্মবিশ্বাসের দিকে ঠেলে দিয়েছিল। ফলে ভারতীয় জনগণ নিজেদের সামরিক বাহিনীর সক্ষমতার চেয়েও বেশি যুদ্ধ উন্মাদনায় পড়ে গিয়েছিল। চূড়ান্তভাবে ফাঁপা আত্মবিশ্বাস হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ায় জনগণ সরকারের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।

 

 

পাকিস্তানিদের যুদ্ধে টিকে থাকার কারণ : প্রথমত, পাকিস্তান অভিযানের নাম ‘অপারেশন বুনইয়ানুম মারসুস’ দিয়ে পুরো জাতিকে ধর্মীয় জানবাজ যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত করেছিল। তাদের যুদ্ধের যৌক্তিকতা ছিল গ্রহণযোগ্য। এক দিকে ভারতের একতরফা আক্রমণ এবং অন্য দিকে সিন্ধুর পানি বন্ধের হুমকি তাদের জীবন-মরণ যুদ্ধে অনুপ্রাণিত করেছিল। তা ছাড়া পাকিস্তান সশস্ত্রবাহিনী প্রতিরক্ষা এবং প্রতি-আক্রমণ দুটো ক্ষেত্রে ‘সারপ্রাইজ’ অর্জনে সক্ষম হয়েছিল, যেটি যুদ্ধে জয়ের মূলমন্ত্র।

 

 

চীনা প্রযুক্তির জে-১০ বিমান দিয়ে রাফায়েল ধ্বংস, জেএফ-১৭ দিয়ে ব্রহ্মস ক্ষেপণাস্ত্র মজুদাগার এবং এস-৪০০ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ধ্বংস করে পাকিস্তান ভারতকে কিংকর্তব্যবিমূঢ় করে দিয়েছিল চার দিনের যুদ্ধে। পাকিস্তানি বিমান সেনাদের সাহসিকতা, দক্ষতা ও সাইবার সৈনিকদের উচ্চ কারিগরি দক্ষতা ভারতীয়দের পিছু হটাতে বাধ্য করেছিল। পাকিস্তান শুরু থেকে ছিল ‘ডিফেন্সিভ’। তারা মাথা গরম না করে ধৈর্য, সাহসিকতা, ধীরস্থির কিন্তু ক্ষিপ্রতার সাথে প্রতিরক্ষা এবং প্রতি-আক্রমণ রচনা করে। এ দিকে ভারত শুধু ইসরাইলের সমর্থন পেলেও পাকিস্তান চীনসহ বেশ কয়েকটি রাষ্ট্রের নৈতিক সমর্থন পায়। অন্য দিকে পুরো পশ্চিমা বিশ্ব নিরপেক্ষ অবস্থান নেয়। এখানে ভারতের ‘জঙ্গিবাদী’ কার্ডের হিসাব ভুল প্রমাণিত হয়। ফলে ভারতের ‘উগ্র হিন্দুত্ববাদী’ পালে বাতাস লাগেনি। এটি ভারতকে পর্যুদস্তু হতে বাধ্য করে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের ভারত থেকে মুখ ঘুরিয়ে নেয়া ছিল মোদির মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার মতো।

 

 

ভারতের কৌশলগত পরাজয় : চার দিনের ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে জয়-পরাজয় অনিষ্পত্তিমূলক হলেও ভারতের কৌশলগত পরাজয় হয়েছে বলে বিশ্লেষকরা মনে করেন। প্রথমত, ভারত আঞ্চলিক আধিপত্যের দাবিদার থাকলেও এ যুদ্ধের বাস্তবতা ভারত-পাকিস্তানকে কৌশলগত সমভূমিতে নিয়ে এসেছে। ভারতের পাকিস্তানকে সন্ত্রাসী রাষ্ট্রের তকমা দেয়ার চেষ্টা বিফল হয়েছে। উল্টো পাকিস্তানের অভ্যন্তরে বেসামরিক স্থাপনায় ঘুমন্ত মানুষের ওপর হামলা করে ‘জঙ্গি আস্তানা’ ধ্বংসের ভারতীয় বয়ান বিশ্ব গ্রহণ করেনি।

 

 

অন্য দিকে ভারতীয় মিডিয়া বিশ্ব দরবারে খেলো হয়ে পড়েছে! অতীতের যুদ্ধগুলোতে দ্বিপক্ষীয় সমঝোতা সম্ভব হলেও এ যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র তৃতীয় দেশ হিসেবে যুক্ত হয়েছে। তা ছাড়া কাশ্মির নিয়ে ট্রাম্পের মধ্যস্থতার প্রস্তাব ভারতের কাশ্মির ইস্যুর দ্বিপক্ষীয় অবস্থান নড়বড়ে করে দিয়েছে। ভারতের সবচেয়ে বড় ক্ষতি হয়েছে অভ্যন্তরীণভাবে। মিডিয়ার দ্বারা মিথ্যা বীরত্ব প্রচার করে জনগণকে অন্ধকারে রাখা হয়েছে। অথচ ভারত সরকার গোপনে শতাধিক নিহত সেনাকে মরণোত্তর সম্মাননা দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলে জানা যায়। এদের মধ্যে রাফায়েল যুদ্ধবিমানের তিনজনসহ মোট চারজন পাইলট এবং এস-৪০০ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার পাঁচজন অপারেটর রয়েছেন। (আমার দেশ : ৮ জুলাই ২০২৫) সত্যিকারার্থে চূড়ান্তভাবে উপমহাদেশে ভারতের সামরিক শ্রেষ্ঠত্বের বেলুন ফুটো হয়ে গেছে!

 

 

যুদ্ধের প্রভাব : চার দিনের ‘উচ্চ তীব্রতার’ যুদ্ধ আঞ্চলিক ও বিশ্বব্যবস্থায় অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলবে। এর সাম্প্রতিক প্রভাব হলো চীনা চেংদু যুদ্ধবিমান নির্মাণ কোম্পানির শেয়ারবাজার চাঙ্গা হয়েছে এবং ফরাসি রাফায়েল নির্মাণ কোম্পানির শেয়ারে ধস নেমেছে। এ যুদ্ধ আঞ্চলিক ও বিশ্ব অস্ত্র প্রতিযোগিতা বাড়বে। পশ্চিমাশক্তিগুলো চীনের অস্ত্রবাজারকে চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে জ্ঞান-বিজ্ঞান, অর্থবিত্ত সব বহুগুণ বাড়িয়ে অস্ত্র তৈরিতে মনোযোগ দেবে। আঞ্চলিকভাবেও পাক-ভারত অস্ত্র সংগ্রহ প্রতিযোগিতা তুঙ্গে উঠবে। ভারতের ‘জঙ্গিবাদ’ নেরেটিভ নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়বে। ফলে পাকিস্তানকে ঘায়েল করার এই অস্ত্র ভোঁতা হয়ে যাবে। ভারতের মিডিয়া অতিরঞ্জিত প্রচারণার দায়ে সার্বিকভাবে আস্থাহীনতায় ভুগতে পারে। আর যুদ্ধের বৃহত্তর কৌশল ও রণকৌশল সব ক্ষেত্রে জঙ্গিবিমান ও ড্রোনের ব্যবহারকে কেন্দ্রবিন্দুতে রেখে নতুন ‘প্রিন্সিপলস অব ওয়ার’ বা ‘যুদ্ধজয়ের নীতিমালা’-এর তালিকা সাজাতে হতে পারে। তবে সবচেয়ে বড় যে প্রভাব পড়বে সেটি হলো নরেদ্র মোদি ও তার দল বিজেপির জনপ্রিয়তায় ধস নামতে পারে। এমনকি বিজেপির টানা চতুর্থবার ক্ষমতায় আসা কঠিন হয়ে পড়বে। ইতোমধ্যে কংগ্রেস ও অন্যান্য দল এ যুদ্ধে ভারতের লেজেগোবরে অবস্থার জন্য মোদিকে দায়ী করছে।

 

লেখক : নিরাপত্তা বিশ্লেষক