কল করুন

কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স

বাণিজ্যযুদ্ধ : যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্কনীতির যে প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে

সানজিদা বারী [আপডেট: বণিকবার্তা, ৩০ জুলাই ২০২৫]

বাণিজ্যযুদ্ধ : যুক্তরাষ্ট্রের পারস্পরিক শুল্কনীতির যে প্রভাব পড়বে বাংলাদেশে

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার ফলে ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর করতে যাচ্ছে, যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত হবে।

 

 

 

প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প সম্প্রতি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেছেন, যার ফলে ২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র নতুন শুল্ক ব্যবস্থা কার্যকর করতে যাচ্ছে, যা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের ওপর আরোপিত হবে। একই সঙ্গে তিনি বিশ্বের বহু দেশের উদ্দেশে চিঠি পাঠিয়েছেন, যাতে উল্লেখ রয়েছে—ওই তারিখ থেকে এসব দেশের ওপর পারস্পরিক শুল্কহার প্রয়োগ শুরু হবে।

 
 
 
 
 
 
 
 

‘‌আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির অংশ হিসেবে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প পারস্পরিক শুল্ক বাস্তবায়নের ওপর জোর দিয়েছেন। এ নীতির আওতায় তিনি সেসব দেশের ওপর শুল্ক আরোপ করছেন যারা মার্কিন পণ্যের ওপর উচ্চ শুল্ক বা অ-শুল্ক বাধা বজায় রেখেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের মতে, এ পদক্ষেপ যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার এবং দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতি মোকাবেলায় কার্যকর ভূমিকা রাখবে।

 

 

 

বাংলাদেশ, ভারত, ভিয়েতনাম, চীনসহ একাধিক দেশ এ নতুন শুল্ক কাঠামোর আওতায় এসেছে। কোনো কোনো দেশের নতুন শুল্কহার ২ এপ্রিল ঘোষিত হারের তুলনায় কম হতে পারে; আবার অন্যদের জন্য তা বাড়তেও পারে।

 

 

চিঠিপ্রাপ্ত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে:

 

জাপান (২৫ শতাংশ), কোরিয়া (২৫ শতাংশ), দক্ষিণ আফ্রিকা (৩০ শতাংশ), কাজাখস্তান (২৫ শতাংশ), লাওস (৪০ শতাংশ), মালয়েশিয়া (২৫ শতাংশ), মিয়ানমার (৪০ শতাংশ), তিউনিসিয়া (২৫ শতাংশ), বসনিয়া ও হার্জেগোভিনা (৩০ শতাংশ), ইন্দোনেশিয়া (৩২ শতাংশ), বাংলাদেশ (৩৫ শতাংশ), সার্বিয়া (৩৫ শতাংশ), কম্বোডিয়া (৩৬ শতাংশ) এবং থাইল্যান্ড (৩৬ শতাংশ)।

 

 

এর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়া এ নতুন বাণিজ্য ধাক্কা মোকাবেলার চেষ্টা করছে।

 

২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে কার্যকর হতে যাওয়া এ পারস্পরিক শুল্ক ব্যবস্থার আওতায় বাংলাদেশের ওপর ৩৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ একটি তাৎপর্যপূর্ণ সিদ্ধান্ত। যদিও এটি বাংলাদেশের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানে বড় চ্যালেঞ্জ সৃষ্টি করতে পারে, তবুও কাঠামোগত সংস্কার ও বাজারভিত্তিক কৌশলের মাধ্যমে এ পরিস্থিতি মোকাবেলা সম্ভব।

 

 

কেন এ শুল্ক আরোপ?

বৈষম্যমূলক বাণিজ্য প্রথা থেকে মুক্তি

 

 

ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম দিন থেকেই প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বারবার বলেছেন যে মার্কিন শ্রমিক ও ব্যবসায়ীরা বৈষম্যমূলক বাণিজ্য নীতির শিকার হচ্ছেন। ২০২৫ সালের ২ এপ্রিল তিনি একটি জাতীয় জরুরি অবস্থা ঘোষণা করেন, যার পেছনে ছিল যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল ও দীর্ঘস্থায়ী বাণিজ্য ঘাটতি, অ-পারস্পরিক শুল্ক কাঠামো এবং বিদেশী অর্থনৈতিক নীতির কারণে সৃষ্ট অসমতা।

 

 

হোয়াইট হাউজের মতে, ট্রাম্পের এ ঘোষণা যুক্তরাষ্ট্রের জনগণের স্বার্থ রক্ষায় এক নতুন যুগের সূচনা করবে, যেখানে বিশ্ব বাণিজ্য পরিচালিত হবে ন্যায্যতা ও পারস্পরিকতার ভিত্তিতে।

 

 

আমেরিকার অর্থনৈতিক সার্বভৌমত্ব পুনরুদ্ধার

 

 

ট্রাম্পের নির্বাহী আদেশ ও বাণিজ্য অংশীদারদের উদ্দেশে পাঠানো চিঠিগুলো তার প্রতিশ্রুতিরই প্রতিফলন, যেখানে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের অর্থনৈতিক ও জাতীয় নিরাপত্তার জন্য হুমকি অ-পারস্পরিক বাণিজ্য সম্পর্ককে সরাসরি চ্যালেঞ্জ জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প নিজেকে ইতিহাসের অন্যতম সফল বাণিজ্য আলোচক হিসেবে মনে করেন। তার কৌশলের মূল লক্ষ্য—দীর্ঘদিন ধরে চলে আসা যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী শুল্ক ব্যবস্থার গঠনগত বৈষম্য দূর করা, যা বছরের পর বছর ধরে মার্কিন ব্যবসা ও শ্রমিকদের ক্ষতিগ্রস্ত করে এসেছে।

 

 

যেসব দেশ শুল্ক কিংবা অ-শুল্ক বাণিজ্য বাধা সরিয়ে নিতে আন্তরিক নয়, তারা এখন এ অনমনীয় নীতির পরিণতি ভোগ করছে। তবে ট্রাম্প স্পষ্ট করে জানিয়ে দিয়েছেন, যদি কোনো দেশ যুক্তরাষ্ট্রে নিজস্ব কারখানা স্থাপন করে এবং সেখানে উৎপাদন চালায়, তাহলে তাদের ওপর কোনো শুল্ক আরোপ করা হবে না। তিনি আরো উল্লেখ করেছেন, আমেরিকায় উৎপাদন ও কর্মসংস্থান ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে ফেডারেল অনুমোদন প্রক্রিয়াকে সহজ ও দ্রুততর করার প্রতিশ্রুতি যুক্তরাষ্ট্র বাস্তবায়ন করবে।

 

 

বাংলাদেশের রফতানি ও মার্কিন পারস্পরিক শুল্ক: এক বিশ্লেষণ

 

২০২৫ সালের ১ আগস্ট থেকে যুক্তরাষ্ট্র সরকার বাংলাদেশসহ একাধিক দেশের ওপর ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত পারস্পরিক শুল্ক আরোপ করছে। এটি এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ওপর আরোপিত সর্বোচ্চ হারগুলোর একটি। এ সিদ্ধান্ত বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র বাণিজ্য সম্পর্কের জন্য তাৎপর্যপূর্ণ এক মোড়বদলের ইঙ্গিত দেয়।

 

 

শুল্কের প্রভাব ও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থান

 

 

যুক্তরাষ্ট্রের নতুন উচ্চ শুল্কহার বাংলাদেশের জন্য এক বড় নীতিগত ধাক্কা হিসেবে দেখা দিতে পারে, যা মার্কিন বাজারে দেশের প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানকে ঝুঁকির মুখে ফেলতে পারে। কারণ বাংলাদেশ দীর্ঘদিন ধরে তুলনামূলকভাবে কম দামে পণ্য সরবরাহ করে আসছে, যা ছিল তার মূল প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা।

 

 

তবে বাংলাদেশের পোশাক খাত এখনো যথেষ্ট দৃঢ় ও সম্ভাবনাময়। বিশ্ববাজারে বাংলাদেশ মূলত বেসিক ও মধ্যম মানের পোশাক উৎপাদনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। এই সেগমেন্টে দাম অপেক্ষাকৃত কম এবং উৎপাদন দক্ষতার দিক থেকে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারে এমন দেশের সংখ্যা খুবই সীমিত।

 

 

মার্কিন বাজারের বাস্তবতা

আমেরিকান খুচরা ব্র্যান্ড ও বিক্রেতারা বাংলাদেশ থেকে এত সাশ্রয়ী দামে পোশাক সংগ্রহ করেন যে অতিরিক্ত ৩৫ শতাংশ শুল্ক দেয়ার পরও তাদের মুনাফা ক্ষতিগ্রস্ত হয় না। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ থেকে মাত্র ৫ ডলারে আমদানি করা একটি টি-শার্ট মার্কিন বাজারে বিক্রি হয় ৩০-৩৫ ডলারে। অতিরিক্ত শুল্ক আরোপের পরও খুচরা মূল্য সামান্য বাড়িয়ে সেই অতিরিক্ত ব্যয় সহজেই পুষিয়ে নেয়া সম্ভব, কারণ ভোক্তাদের মধ্যে এর বিরুদ্ধে দৃশ্যমান কোনো প্রতিক্রিয়া দেখা যায় না।

 

 

এ বাস্তবতায় শুল্কের প্রকৃত বোঝা সরাসরি বাংলাদেশের উৎপাদক বা সরবরাহকারীর ওপর পড়ে না, বরং তা মূলত বহন করে আমদানিকারকরা। এর ফলে সরবরাহ ব্যবস্থায় কোনো উল্লেখযোগ্য প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে না, যা রফতানির ধারাবাহিকতা রক্ষায় বাংলাদেশের জন্য ইতিবাচক সংকেত।

 

 

অন্যান্য দেশের পরিস্থিতি ও বাংলাদেশের তুলনামূলক সুবিধা: বাংলাদেশের জন্য শুল্কের চ্যালেঞ্জ ও সম্ভাবনা

 

৩৫ শতাংশ শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশের প্রতিযোগিতা হ্রাস করতে পারে। তবে বাংলাদেশ এখনো বেসিক ও মধ্যম মানের পোশাক উৎপাদনে বিশ্বে অগ্রগণ্য। কম দাম, দক্ষ শ্রমশক্তি ও দীর্ঘমেয়াদি শিল্প অভিজ্ঞতা বাংলাদেশকে তুলনামূলক সুবিধা দেবে বলে আশা করা যায়।

 

 

যদিও শুল্কনীতিতে এ বড় পরিবর্তন একটি চ্যালেঞ্জ, তার পরও বাংলাদেশের জন্য আশাবাদের জায়গা রয়েছে। নিম্নদামি পোশাকবাজারে বাংলাদেশের দক্ষতা, উৎপাদন ক্ষমতা এবং প্রতিযোগিতামূলক মূল্যের সুবিধা বজায় আছে। যদি সরবরাহ চেইনে অংশগ্রহণকারী প্রতিটি পক্ষ সমন্বয় বজায় রাখতে পারে, তবে মার্কিন বাজারে বাংলাদেশের উপস্থিতি অক্ষুণ্ন থাকবে।

 

নতুন ব্যয় ভাগাভাগির কাঠামো

 

 

২০২৫ সালের ২ এপ্রিল ট্রাম্প প্রশাসনের শুল্ক ঘোষণার পর থেকে সরবরাহকারীরা, পোশাক প্রস্তুতকারক এবং খুচরা বিক্রেতাদের মধ্যে একটি নতুন ব্যয়-বণ্টন কাঠামো গড়ে উঠেছে। এ কাঠামোর আওতায় প্রত্যেক পক্ষই শুল্কের একটি নির্দিষ্ট অংশ বহন করছে। ফলে পুরো শুল্কের বোঝা সরবরাহ চেইনের কোনো একক পর্যায়ের ওপর চাপিয়ে দেয়া হচ্ছে না, বরং এটি যৌথভাবে ভাগ করে নেয়া হচ্ছে, যা এ ব্যবস্থাকে দিয়েছে একটি স্থিতিশীল ও টেকসই কাঠামোর সম্ভাবনা। এ অংশীদারত্বমূলক দৃষ্টিভঙ্গি সরবরাহ ব্যবস্থায় ভারসাম্য রক্ষায় কার্যকর ভূমিকা রাখছে।

 

 

ভিয়েতনাম ও ট্রান্সশিপমেন্ট ঝুঁকি

 

 

ভিয়েতনামের ওপর ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হয়েছে এবং ভিয়েতনাম হয়ে আসা ট্রান্সশিপড পণ্যের ওপর ৪০ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হচ্ছে, যা চীনের পুনঃরফতানি কৌশল ঠেকাতে নেয়া একটি পদক্ষেপ। এই ৪০ শতাংশ হার বাংলাদেশের ৩৫ শতাংশ হারের চেয়ে ৫ শতাংশীয় পয়েন্ট বেশি, যা তুলনামূলকভাবে বাংলাদেশের জন্য একটি প্রতিযোগিতামূলক সুবিধা তৈরি করছে। উচ্চ শুল্ক ও ট্রান্সশিপমেন্ট ঝুঁকি এড়িয়ে যেতে চাওয়া আমদানিকারকরা বাংলাদেশের দিকেই ঝুঁকতে পারেন।

চীনের সম্ভাব্য বাজার হারানোর প্রভাব

 

 

চীন যদি মার্কিন বাজারে অংশ হারায়, তবে সেটির একটি অংশ বাংলাদেশের অর্ডারে রূপান্তরিত হতে পারে। ভিয়েতনামের উৎপাদনক্ষমতা এরই মধ্যে প্রায় পূর্ণ সক্ষমতায় পৌঁছে গেছে, ফলে অতিরিক্ত চাহিদা সরাসরি বাংলাদেশে যেতে পারে।

 

 

ভারতের সীমাবদ্ধতা

 

 

যদিও ভারতের সঙ্গে চলমান আলোচনা ফলপ্রসূ হলে তারা আরো অনুকূল শুল্কহার পেতে পারে, তবে দেশটির উৎপাদন সক্ষমতা এখনো অপর্যাপ্ত বড় আকারের মার্কিন বাজার সেবা দিতে। সানজিদা বারী: পিএইচডি শিক্ষার্থী এবং গবেষক, ইউনিভার্সিটি অব ইলিনয় শিকাগো

পোশাক শিল্প গড়ে তুলতে বছর ধরে বিনিয়োগ ও অবকাঠামো গড়তে হয় এবং ভারত সেই পথেই রয়েছে, তবে ধীরগতিতে। ভারতের রয়েছে শক্তিশালী তুলা ভিত্তি ও শ্রমশক্তি, কিন্তু দ্রুত বাজার ধরার সক্ষমতা বাংলাদেশের মতো নয়।

 

বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য সুপারিশ:

 

ভিয়েতনাম ও চীনের বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের অবস্থান তুলে ধরার জন্য বাণিজ্য কূটনীতি জোরদার করতে হবে। দ্রুত সরবরাহ ও উচ্চ উৎপাদন সক্ষমতা—এ দুই দিককে আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের সামনে প্রচার করতে হবে। যুক্তরাষ্ট্রের আমদানিকারকদের জন্য ঝুঁকিহীন উৎস হিসেবে বাংলাদেশের সুনাম আরো দৃঢ় করার জন্য উদ্যোগ নিতে হবে।

 

বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ভারত ১৬ দশমিক ৩৬ বিলিয়ন ডলারের পোশাক রফতানি করেছে, যা বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যের ২ দশমিক ৯৪ শতাংশ হিস্যা। এ হার অনুযায়ী ভারত বিশ্বের পঞ্চম বৃহত্তম রফতানিকারক চীন, বাংলাদেশ, ভিয়েতনাম, তুরস্ক ও কম্বোডিয়ার পরে অবস্থান করছে। এর বিপরীতে বাংলাদেশ ২০২৪ সালে ৩৮ দশমিক ৪৮ বিলিয়ন ডলারের রফতানিসহ ৬ দশমিক ৯০ শতাংশ বৈশ্বিক বাজার শেয়ার ধরে রেখেছে এবং বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম পোশাক রফতানিকারক হিসেবে তার অবস্থান বজায় রেখেছে।

 

 

তুলা উৎপাদন ও শুল্ক সুবিধা থাকলেও পাকিস্তান এখনো বৈশ্বিক পোশাক বাণিজ্যে পিছিয়ে রয়েছে। দক্ষিণ কোরিয়া, জাপান, তুরস্ক ও ভারতের মতো দেশে উৎপাদন ব্যয় তুলনামূলকভাবে বেশি। ফলে এসব দেশ বৈশ্বিক পোশাক ক্রেতাদের কাছে কম আকর্ষণীয়। অন্যদিকে বাংলাদেশ কম উৎপাদন ব্যয় বজায় রেখেছে এবং সেই সঙ্গে রয়েছে বড় পরিসরে উৎপাদন সক্ষমতা ও বহু বছরের অভিজ্ঞতা।

 

 

রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা ও দক্ষ শ্রমিকের অভাবের কারণে মিয়ানমার ও ইথিওপিয়ার পোশাক খাতে প্রবেশের প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়েছে। ফলে বাংলাদেশ একটি নির্ভরযোগ্য উৎস হিসেবে আরো শক্ত অবস্থান লাভ করেছে। বিশ্বব্যাপী নানা প্রতিকূলতার মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি শক্ত অবস্থান ধরে রেখেছে। অফিস অব টেক্সটাইল অ্যান্ড অ্যাপারেলের তথ্যানুযায়ী, চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে এপ্রিল পর্যন্ত সময়ে রফতানি আগের বছরের একই সময়ের তুলনায় ২৯ শতাংশ বেড়ে ২ দশমিক ৯৮ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।

 

 

গত পাঁচ বছরে বাংলাদেশ ধারাবাহিকভাবে যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ১০টি পোশাক রফতানিকারক দেশের মধ্যে অবস্থান ধরে রেখেছে। ২০২০-২৪ সালের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানি ৪০ দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে। যেখানে ২০২০ সালে রফতানির পরিমাণ ছিল ৫ দশমিক ২২ বিলিয়ন ডলার, তা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৭ দশমিক ৩৪ বিলিয়ন ডলারে। এ প্রবৃদ্ধি স্থানীয় রফতানিকারকদের সহনশীলতা ও সক্ষমতার প্রতিফলন, যা বৈশ্বিক ও অভ্যন্তরীণ নানা চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও বজায় রয়েছে।

 

 

তবে এ প্রবৃদ্ধি ধরে রাখতে এবং প্রতিযোগিতায় এগিয়ে থাকতে বাংলাদেশকে অবকাঠামো ও সেবা ব্যবস্থার সীমাবদ্ধতা দূর করতে হবে। দক্ষ বন্দর পরিচালনা, নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস ও বিদ্যুৎ সরবরাহ এবং সহজ ও দ্রুত সরবরাহ ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে পারলে পূর্ণ উৎপাদন সক্ষমতা ও সময়মতো রফতানি সম্ভব হবে।

 

 

এ কৌশলগত সুবিধা ও প্রয়োজনীয় উন্নয়ন কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ যুক্তরাষ্ট্রে শুল্ক বৃদ্ধির প্রভাব মোকাবেলা করতে পারবে এবং বিশ্বের সবচেয়ে বড় পোশাকবাজারে নিজের অংশ আরো বাড়াতে সক্ষম হবে। সুতরাং আশা করা যায় যে আগামী দিনগুলোতেও যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের পোশাক রফতানির প্রবৃদ্ধি অব্যাহত থাকবে।

 

 

উচ্চ শুল্কহার বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের বিষয় হলেও বাস্তবতা বলছে যে এখনই যুক্তরাষ্ট্রের বাজার থেকে বাংলাদেশ ছিটকে পড়বে না, বরং কৌশলী মূল্যনির্ধারণ, যৌথ ব্যয় ভাগাভাগি এবং উৎপাদন দক্ষতা কাজে লাগিয়ে এ চ্যালেঞ্জকে নতুনভাবে মোকাবেলা করা সম্ভব। বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের জন্য এখন সময় এসেছে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে দীর্ঘমেয়াদি অবস্থান বজায় রাখতে কৌশলগত অংশীদারত্ব, উৎপাদন গুণগত মান উন্নয়ন এবং বাজার বহুমুখীকরণের দিকে আরো মনোযোগ দেয়ার। ৩৫ শতাংশ শুল্ক বাংলাদেশের জন্য তাৎক্ষণিক চাপ সৃষ্টি করলেও বিদ্যমান দক্ষতা, উৎপাদন ব্যয় ও বাজার বাস্তবতা বিবেচনায় বাংলাদেশ মার্কিন বাজারে তার অবস্থান ধরে রাখতে পারবে। কৌশলগত পদক্ষেপ ও কাঠামোগত উন্নয়নের মাধ্যমে এ সংকটকে বাংলাদেশের জন্য নতুন সম্ভাবনায় রূপ দেয়া সম্ভব।