১৫ শতাংশ শুল্ক চুক্তি সই করে বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন
রয়টার্স [আপডেট : প্রথম আলো, ২৮ জুলাই ২০২৫]

ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) সঙ্গে বাণিজ্য চুক্তি করেছে যুক্তরাষ্ট্র। এর আওতায় বেশির ভাগ ইউরোপীয় পণ্যের ওপর ১৫ শতাংশ আমদানি শুল্ক আরোপ করা হয়েছে, যা পূর্বঘোষিত শুল্কহারের তুলনায় অর্ধেক। আগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
গতকাল রোববার এ চুক্তির মধ্য দিয়ে দুই মিত্রপক্ষের মধ্যে বড় ধরনের বাণিজ্যযুদ্ধ এড়ানো গেছে বলে মনে করা হচ্ছে। পুরো বিশ্বে যে বাণিজ্য হয়, তার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ এই দেশ ও জোটের মধ্যে হয়ে থাকে।
সাংবাদিকদের ট্রাম্প বলেন, ‘আমি মনে করি, এটিই এখন পর্যন্ত সবচেয়ে বড় চুক্তি। তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়নের পরিকল্পনার প্রশংসা করেন। এই পরিকল্পনার আওতায় তারা যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬০০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করবে এবং যুক্তরাষ্ট্র থেকে জ্বালানি ও সামরিক সরঞ্জাম কেনার পরিমাণ অনেক বেশি বাড়াবে।
ট্রাম্প বলেন, এই চুক্তি গত সপ্তাহে জাপানের সঙ্গে সই হওয়া ৫৫ হাজার কোটি ডলারের চুক্তিকেও ছাড়িয়ে গেছে। তাঁর আশা, দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাষ্ট্রের রপ্তানিকারকদের প্রতি যে অন্যায্য আচরণ করা হয়েছে, এই চুক্তির মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটবে।
ভন ডার লেন বলেন, ‘বিশ্বের দুই বড় অর্থনীতির মধ্যে একটি বাণিজ্য চুক্তি হয়েছে, আর এটা অনেক বড় ব্যাপার। এটি স্থিতিশীলতা আনবে।’
চুক্তি অনুযায়ী, ইউরোপ আগামী কয়েক বছরে যুক্তরাষ্ট্র থেকে ৭৫ হাজার কোটি ডলারের জ্বালানি কিনবে এবং শত শত কোটি ডলার মূল্যের অস্ত্রও কিনবে বলে জানিয়েছেন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প। সবকিছু ঠিকঠাক চললে এই চুক্তি ইউরোপের বেশ কিছু বড় কোম্পানির জন্য ভালো খবর হতে পারে—এর মধ্যে রয়েছে এয়ারবাস, মার্সিডিজ বেঞ্জ ও নোভো নরডিস্ক।
তবে চুক্তির আওতায় নির্ধারিত ১৫ শতাংশ শুল্ককেও ইউরোপের অনেকেই এখনো বেশি বলে মনে করছেন। কারণ, শুরুতে ইউরোপ আশা করেছিল, দুই পক্ষই একে অপরের পণ্যে শুল্কের পরিমাণ শূন্য রাখবে। প্রত্যাশার তুলনায় বেশি হলেও আগে যে ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেওয়া হয়েছিল, তার তুলনায় ১৫ শতাংশ শুল্ক কম।
জার্মান চ্যান্সেলর ফ্রিডরিখ মের্ৎস এই চুক্তিকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, এই চুক্তি বাণিজ্যযুদ্ধ এড়াতে সাহায্য করেছে। বাণিজ্যযুদ্ধ শুরু হলে জার্মানির রপ্তানিনির্ভর অর্থনীতি এবং বড় আকারের গাড়িশিল্পের ওপর বড় ধরনের প্রভাব পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রে বর্তমানে গাড়ি ও যন্ত্রাংশ আমদানির ওপর ২৭ দশমিক ৫ শতাংশ শুল্ক কার্যকর রয়েছে। ভক্সওয়াগন, মার্সিডিজ আর বিএমডব্লিউর মতো জার্মান গাড়ি নির্মাতাদের ওপর এ শুল্কের সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে।
১২ জুলাই ট্রাম্প হুমকি দিয়েছিলেন, ১ আগস্ট থেকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পণ্যের ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করা হবে। যুক্তরাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে কয়েক সপ্তাহের আলোচনা করেও কোনো পূর্ণাঙ্গ বাণিজ্য চুক্তি না হওয়ার পর ট্রাম্প এমন ঘোষণা দিয়েছিলেন।
যদি গতকাল কোনো চুক্তি না হতো, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নও পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে ৯ হাজার ৩০০ ইউরো (১০ হাজার ৯০০ কোটি ডলার) মূল্যের মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক বসানোর প্রস্তুতি নিয়েছিল। চুক্তি না হলে ট্রাম্পও তাঁর ৩০ শতাংশ শুল্কের হুমকি বাস্তবায়ন করতেন।